
মেইতেই সংগঠনের এক শীর্ষনেতা-সহ পাঁচ জনের গ্রেফতারি নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে পুলিশের ছোড়া টিয়ার গ্যাসে আহত হয়েছেন ১১ জন। রাজ্যজুড়ে হিংসা ছড়ানোর আশঙ্কায় আগে থেকে পাঁচ জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
শনিবার সিবিআই আরামবাই টেঙ্গল নামের একটি মেইতেই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা তথা হেড কনস্টেবল কানন সিংকে গ্রেফতার করে। সঙ্গে তাঁর আরও চারজন সহকারিকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে হিংসায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারির পরেই তাঁদের গুয়াহাটিতে স্থানান্তরিত করা হয়।
ওই পাঁচ জনের গ্রেফতারি পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। গ্রেফতারির প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করেন, যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, বিক্ষোভকারীরা ইয়ারিপোকে একটি পুলিশ পোস্টেও আগুন দেন। বিক্ষোভকারিদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। পিটিআই সূত্রে খবর, এর ফলে ১১ জন আহত হয়েছেন। জানা গেছে, ইম্ফল পূর্বে কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি বাসেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে মণিপুর পুলিশের তরফ থেকে ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুলিশের তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, থৌবল, বিষ্ণুপুর এবং কাকচিং জেলায় শনিবার রাত থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। আগামী পাঁচদিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। পুলিশ জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভাবে উসকানিমূলক প্রচার চলছে, তাতে রাজ্যে ফের হিংসা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বড়সড় হিংসার আশঙ্কা এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে, রাজ্যজুড়ে ফের এই উত্তেজনার পরিস্থিতি এড়াতে ইতিমধ্যেই শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং রাজ্যসভার সাংসদ লেইশেম্বা সানাজাওবা সহ ২৫ জন বিধায়কের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা। এই নিয়ে বিজেপি বিধায়ক এল ইবোমচা বলেন, রাজ্যপাল বন্যা ত্রাণে এই গোষ্ঠীর ভূমিকা স্বীকার করেছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন যে প্রশাসন আরামবাই টেঙ্গোলকে লক্ষ্য করছে না।
এদিকে এই গ্রেফতারির ফলে যে ফের মণিপুরে অস্থিরতার পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে তার আশঙ্কা করেছেন কংগ্রেস বিধায়ক ওকরাম সূর্যকুমার। গ্রেফতারির সমালোচনা করে তিনি বলেন, "প্রশাসন যদি কাউকে গ্রেফতারের পরিকল্পনা করে, তাহলে জনসাধারণের কাছে স্পষ্টীকরণ দিতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং রাজ্যে শান্তি পুনরুদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে"।
দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কুকি-জো জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে সাসপেনশন অফ অপারেশন (SoO) চুক্তির আওতায় একটি নির্ধারিত বৈঠকের আগে এই নতুন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। এই হিংসার ফলে সে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ২৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাড়ি ছাড়া হয়েছেন বহু মানুষ।
দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ইস্তফা দেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী তথ বিজেপি নেতা এন বীরেন সিং। রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লার হাতে তাঁর ইস্তফাপত্র তুলে দেন। ২০১৭ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো এন বীরেন সিং মণিপুরে হিংসার ঘটনা ঘটার পর থেকে বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হচ্ছিলেন। একাধিকবার তাঁর নিজের দলের নেতৃত্ব ও কর্মীদের কাছেই তিনি সমালোচিত হয়েছেন। এছাড়াও গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এক অডিও টেপ বিতর্ক তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। বিভিন্ন বিতর্কের জেরে অবশেষে তিনি ইস্তফা দিতে বাধ্য হন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন