
সময় যত গড়াচ্ছে ততই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। নিয়ম মেনে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে একনাথ শিন্ধে ইস্তফা দিলেও রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হতে চলেছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। সংখ্যার বিচারে মুখ্যমন্ত্রী পদ বিজেপির প্রাপ্য হলেও ইতিমধ্যেই সেই পদের দাবি জানিয়েছেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী শিবসেনার একনাথ শিন্ধে।
এদিনই শিবসেনা মুখপাত্র শীতল মাত্রে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একনাথ শিন্ধেকেই দায়িত্ব দেওয়া উচিত। কারণ সামনেই রাজ্যে পুর নির্বাচন। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে এখনই মুখ্যমন্ত্রী পদে বদল উচিত হবেনা।
তিনি আরও বলেন, শিন্ধে দক্ষতার সঙ্গে তাঁর দায়িত্বভার সামলেছেন। রাজ্যে মারাঠাদের কোটার বিষয়টিও তিনি দক্ষ হাতে সামাল দিয়েছেন। সেই কারণেই এবারের নির্বাচনে এই গোষ্ঠী সম্পূর্ণভাবে মহাযুতির পাশে দাঁড়িয়েছে, সমর্থন জুগিয়েছে। তাই এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বদল সঠিক হবেনা। একজন মারাঠা জাতিগোষ্ঠীর কাউকেই মুখ্যমন্ত্রী করা উচিত।
এবারের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে ২৮৮ আসনের মধ্যে মহাযুতি জয়ী হয়েছে ২৩৪ আসনে। যার মধ্যে বিজেপি জয়ী হয়েছে ১৩২ আসনে, শিবসেনা শিন্ধে গোষ্ঠী ৫৭ আসনে এবং এনসিপি অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী ৪১ আসনে। যদিও তা সত্ত্বেও দেবেন্দ্র ফড়নবীশই যে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন সেরকম কোনও ঘোষণা এখনও করা হয়নি।
বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষ ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পদে দেবেন্দ্র ফড়নবীশের পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে। তাদের যুক্তি, একক বৃহত্তম দল হিসেবে বিজেপিই ওই পদের দাবিদার। অন্যদিকে শিবসেনার পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে শিন্ধেকেই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিতে হবে।
মহাযুতির অপর শরিক অজিত পাওয়ার নির্বাচনে ৪১ আসন পেলেও মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি জানায়নি। বরং তাদের প্রছন্ন সমর্থন আছে বিজেপির প্রতি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার হিসেবে বিজেপির ১৩২ আসনের সঙ্গে অন্য দুই শরিকের যে কোনও একজনকেই সঙ্গে পেলে আপাতত সরকারের সামনে কোনও বিপদ থাকবে না। সেই দিক থেকে একনাথ শিন্ধের দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া নাও হতে পারে। কারণ ৫৭ আসনে জয়ী হলেও একনাথ শিন্ধে খুব একটা দর কষাকষির জায়গায় নেই।
যদিও হাল ছাড়তে রাজি নয় একনাথ শিন্ধের শিবসেনা। ইতিমধ্যেই শিবসেনা নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রী সরকারি বাংলো ‘বর্ষা’-র সামনে এক জমায়েত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে বিজেপির ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিবসেনা। যদিও সূত্র অনুসারে, একনাথ শিন্ধে এখনই এই ধরণের আয়োজন করতে বারণ করেছেন। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, আমাকে ভালোবেসে কিছু মানুষ মুম্বাই আসতে চাইছেন এবং আমার বাড়ির সামনে জমায়েত হতে চাইছেন। আমি তাদের এই ভালবাসায় আপ্লুত। কিন্তু তাদের অনুরোধ করছি এই মুহূর্তে এইভাবে জমায়েত হওয়া সঠিক হবেনা।
তবে একনাথ শিন্ধে একথা বললেও শিবসেনা নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ‘বিহার মডেল’ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিহারের উদাহরণ দিয়ে তাদের দাবি, বিহারেও বেশি সংখ্যক আসন থাকা সত্ত্বেও বিজেপির বদলে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল নীতিশ কুমারকে। এখানেও সেভাবেই একনাথ শিন্ধেকেই মুখ্যমন্ত্রী করা উচিত।
যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি কিন্তু এক বিজেপি নেতা জানিয়েছেন, রাজ্যের মানুষ খুব স্পষ্টভাবে দেবেন্দ্র ফড়নবীশের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাই আমার মতে দেবেন্দ্র ফড়নবীশেরই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত। তার নেতৃত্বেই মহাযুতির ঐক্য অটুট থাকবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন