
দেশের প্রথম চরম দারিদ্র্য মুক্ত রাজ্য হতে চলেছে বামশাসিত কেরালা। অর্থাৎ সে রাজ্যে চরম দারিদ্রসীমার নীচে একজনও থাকবেন না। আগামী ১ নভেম্বরে কেরলকে চরম দারিদ্র্য মুক্ত রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করবে সে রাজ্যের প্রশাসন। এমনটাই জানিয়েছেন সে রাজ্যের মন্ত্রী এম বি রাজেশ।
এর আগে গত এপ্রিলে কেরালার কান্নুর লোকসভার অন্তর্গত ধর্মাদাম (Dharmadam) বিধানসভা কেন্দ্রকে রাজ্যের প্রথম চরম দারিদ্র্য মুক্ত বিধানসভা কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তখনই তিনি জানিয়েছিলেন, নভেম্বরের মধ্যে গোটা কেরালাকে চরম দারিদ্র্য মুক্ত রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করা হবে। জোরকদমে সেই কাজ চলছে। ২০২১ সালেই এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে বিজয়নের সরকার।
২০২১ সালের আগস্ট মাসে রাজ্য জুড়ে চরম দরিদ্রদের চিহ্নিত করা এবং তাদের সহায়তা দেবার পরিকল্পনা নেয় বাম সরকার। ‘এক্সট্রিম পভার্টি ইরাডিকেশন প্রজেক্ট’ (ইপিইপি) নামক প্রকল্প চালু করে। এই কাজে নেতৃত্ব দেয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন দপ্তর। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ধর্মাদাম বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ১৯৬টি পরিবারকে চিহ্নিত করা হয় এবং রাজ্য জুড়ে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মোট ৬৪,০০২ জনকে চিহ্নিত করা হয়।
যে কোনো মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য এবং রোজগার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে কেরালাতেও প্রথম গুরুত্ব দেওয়া হয় এই মৌলিক বিষয়গুলির ওপরেই। রাজ্য সরকারের এক আধিকারিক এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে এই বিষয়গুলির ওপর জোর দিয়েই এই পরিবারগুলিকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবারগুলির সমস্ত রকম চাহিদা পূরণের উপর জোর দেওয়া হয়।
যেমন, ধর্মাদাম বিধানসভা কেন্দ্রে চরম দারিদ্র্য সীমার নীচে থাকা পরিবারগুলিকে আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র, জব কার্ড প্রদান করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সঙ্গে ওই পরিবারগুলিকে যুক্ত করার কাজ করা হয়।
ঘরের প্রয়োজন আছে এরকম ২৭টি পরিবারকে ‘লাইফ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। ৪০ টি পরিবারকে ঘর সারাই করবার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়া হয়। এছাড়াও এইসব পরিবারগুলির জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা, খাদ্যের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তাদের রোজগারের জন্য সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এভাবেই গোটা রাজ্যজুড়েই চরম দারিদ্র্য সীমার নীচে থাকা পরিবারগুলিকে সেখান থেকে বের করে আনা হয়। এই কাজে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে।
মন্ত্রী এম বি রাজেশ জানিয়েছেন, এই কাজে রাজ্য সরকার ১০০ শতাংশ সফল হয়েছে। অর্থাৎ স্বাধীনতার ৭৮ বছর পরে কেরল এমন রাজ্য হতে চলেছে যেখানে চরম দারিদ্রসীমার নীচে একজনও নেই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন