
নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের অভাবে ২০০৬ সালে মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১২ জনকে বেকসুর খালাস করে দিল বম্বে হাইকোর্ট। এই ১২ জনের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ছিল। তবে হাই কোর্টের বর্তমান রায়ের পর সকলেরই জেলমুক্তি হতে চলেছে। এই বিস্ফোরণে ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ৮০০-র বেশি লোক আহত হয়েছিলেন।
সোমবার বিচারপতি অনিল কিলোর ও বিচারপতি শ্যাম চন্দকের নেতৃত্বাধীন একটি বিশেষ বেঞ্চ জানায়, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে মামলাকারীরা। শুধুমাত্র সন্দেহর কারণে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে অভিযুক্তরাই অপরাধটি করেছিলেন। ফলে আগে যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা সব খারিজ করে দেওয়া হল”।
আদালত তার রায়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত ত্রুটি তুলে ধরে জানায়, মূল সাক্ষ্যদাতাদের বক্তব্য ছিল অসংলগ্ন ও অবিশ্বস্ত। অভিযুক্তদের থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল নির্যাতনের মাধ্যমে - যা প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
রায়ে আরও বলা হয়, একজন সাক্ষী একাধিক অপরাধ মামলায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন, যার ফলে তাঁর সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। অন্যদিকে, বহু সাক্ষী ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হন কীভাবে তাঁরা এত বছর পরেও অভিযুক্তদের মুখ মনে রাখতে পেরেছেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, আরডিএক্স এবং অন্যান্য বিস্ফোরক উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রমাণের সংরক্ষণ ও পরিবহনে গুরুতর ত্রুটি ছিল। ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোর আগে প্রমাণ করা যায়নি যে ওই প্রমাণগুলির নিরাপত্তা বজায় ছিল, কোনও কাটাছেঁড়া করা হয়নি এগুলোর সাথে।
এর আগে ২০১৫ সালে মহারাষ্ট্র সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আইন (এমসিওসিএ) আদালত এই ঘটনায় অভিযুক্ত ১২ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেছিল। পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়ে ছিল।
১২ জন দোষী সাব্যস্তদের মধ্যে কামাল আনসারী ২০২১ সালে নাগপুর জেলে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাকি ১১ জন প্রায় ১৯ বছর কারাগারে কাটানোর পর এখন মুক্তি পেতে চলেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বাইয়ে পশ্চিম রেলওয়ের সাতটি ট্রেনে ব্যস্ত সময়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ হয়। ১৮৯ জন নিহত হন এবং ৮০০-রও বেশি মানুষ আহত হন। বিস্ফোরণগুলো প্রথম শ্রেণির বগিতে ঘটে এবং ভারতের ইতিহাসে এটি অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে বিবেচিত হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন