
ঘটনার মাসখানেক আগে কাছের এক বন্ধুকে সমস্ত কিছু জানিয়েছিলেন ওড়িশার নির্যাতিতা। কী ভাবে বিভাগীয় প্রধান দিনের পর দিন ধরে তাঁকে হেনস্থা করে চলেছেন, সে কথাও জানিয়েছিলেন। এই নির্যাতন বেশ কয়েকমাস ধরেই চলছিল বলে জানিয়েছেন নিহতের সহপাঠী। তাঁর কথায়, তাঁর বান্ধবীকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থায় নিহত ছাত্রীর বন্ধু জানিয়েছেন, "কয়েক মাস আগে, আমাকে ও জানায় বিভাগীয় প্রধান ওকে হেনস্থা করছেন। ও জানায়, ইচ্ছাকৃতভাবে ওকে পরীক্ষায় ফেল করানো হচ্ছে এবং পূর্ববর্তী পরীক্ষাগুলোর ফলাফল আটকে রাখা হচ্ছে"।
বন্ধু আরও জানান, "ক্লাসের মধ্যেও সবার সামনে হেনস্থা করা হয় ওকে। যার প্রতিবাদে ৩০ জুন কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলাম আমরা, বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি নিয়ে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে এক সপ্তাহ অপেক্ষার কথা জানানো হয়"।
এরপর ১২ জুলাই কলেজের গেটের সামনেই গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন নির্যাতিতা। নির্যাতিতার বন্ধুর কথায়, ‘‘ওইদিন ওরা অধ্যক্ষের কাছে গিয়েছিল। অধ্যক্ষ বলেছিল, একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আরও সময় চাই। এরপর আমরা বন্ধুরা কয়েক জন কলেজের বাইরে যাই কিছু ক্ষণের জন্য। খেতে গিয়েছিলাম আমরা। ও (নির্যাতিতা) ভিতরেই ছিল। কিছু ক্ষণ পরে ফোন আসে। ফোনের ও পার থেকে বলা হল, আমাদের বন্ধুকে নাকি অগ্নিপরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। অগ্নিপরীক্ষা শব্দটা ব্যবহার করছি এই কারণে যে, নিশ্চয়ই অধ্যক্ষ এমন কিছু বলেছিল, ও সহ্য করতে পারেনি। বিচারের জন্য লড়তে লড়তে একেবারে ভেঙে পড়েছিল ও। একটা মানুষ মানসিক ভাবে কতটা বিধ্বস্ত হলে এ কাজ করতে পারে!’’
ওই ছাত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তরুণীর দেহের ৯৫ শতাংশই পুড়ে গেছে। সংকটজনক অবস্থায় বালাসোরের জেলা হাসপাতাল থেকে তাঁকে রেফার করা হয় এইমস-এ। সেখানেই গত সোমবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
নির্যাতিতার বন্ধু আরও জানিয়েছেন, "বিভাগীয় প্রধান ৩০০ জন শিক্ষার্থীকে তাঁকে সমর্থনের জন্য ব্যবহার করেছিলেন। এবিভিপির একজন সক্রিয় সদস্যকে আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই শিক্ষার্থীরা আমার বন্ধুর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে চিঠিও দিয়েছিল। অদ্ভূতভাবে এখন এঁরাই ন্যায়বিচারের কথা বলছে"।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল এবং কলেজের অধ্যক্ষকে। তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি দল গঠন করেছে রাজ্য।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন