অর্থাভাবে বাতিল পড়ুয়াদের একাধিক স্কলারশিপ! বরাদ্দ বেড়েছে মোদীর 'পরীক্ষা পে চর্চা'য়, কটাক্ষ বিরোধীদের

People's Reporter: ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে এনওএস স্কলারশিপের জন্য ১০৬ জন পড়ুয়া নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত তালিকায় ৪০ জন স্থান পেয়েছে।
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি - সংগৃহীত
Published on

সরকারের টাকা নেই, যার ফলে বন্ধ হতে চলেছে তফসিলি জাতি-উপজাতি ও দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত 'ন্যাশনাল ওভারসিজ স্কলারশিপ' (এনওএস)। চলতি বছরে নির্বাচিত ৪০ শতাংশ পড়ুয়া এই বৃত্তি বা স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত। কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীনে থাকা মন্ত্রিসভার অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি টাকা ধার্য করতে চাইছে না।

প্রান্তিক অংশের পড়ুয়াদের বিদেশে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি গবেষণার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি বছর 'ন্যাশনাল ওভারসিজ স্কলারশিপ' (এনওএস) নামক এই আর্থিক সাহায্য দেয়। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে এই স্কলারশিপের জন্য ১০৬ জন পড়ুয়া নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক কর্তৃক প্রকাশিত স্কলারশিপ প্রাপকদের তালিকায় ৪০ জন স্থান পেয়েছে। ১ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হয়, ৪০ জনের জন্য 'অ্যাওয়ার্ড লেটার' মারফত অর্থ বরাদ্দের ঘোষণাপত্র পাঠানো হবে। তাঁদের মধ্যে কেউ স্বেচ্ছায় স্কলারশিপ নিতে অস্বীকার করলে বাকি ৬৬ জনের মধ্যে কাউকে দেওয়া যেতে পারে।

তবে স্কলারশিপের টাকা নিয়ে টানাপোড়েন এই প্রথম বার নয়। এর আগেও মৌলনা আজাদ জাতীয় ফেলোশিপ নিয়েও এই ধরণের সমস্যা হয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে প্রায় দেড় হাজারের কাছাকাছি পিএইচডি গবেষক ছাত্রের স্কলারশিপের টাকা আটকে রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গবেষকরা অর্থ সাহায্য পাননি। এছাড়াও কয়েকজনের ক্ষেত্রে আগে থেকেই টাকা আসা বন্ধ। তাও অসীমাংসিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

অন্যদিকে, 'ন্যাশনাল ওভারসিজ স্কলারশিপ' (এনওএস) -এর বরাদ্দে এমন হ্রাস নিয়ে মোদী সরকারকে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। দাবি উঠছে, মোদী সরকারের 'পরীক্ষা পে চর্চা'-য় সরকারি ব্যয় বেড়েছে। ২০১৮ সালে প্রথম 'পরীক্ষা পে চর্চা' শুরু করা হয়। প্রথম বছর তার বরাদ্দ ছিল ৩.৬৭ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে তার বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৮.৮২ কোটি টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ এই সাত বছরে ব্যয় বরাদ্দ অন্তত ৫২২ শতাংশ বেড়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন প্রান্তে মোদীর ছবি দিয়ে ১,১১১টি সেলফি পয়েন্ট তৈরি করা হয়। সরকারি তথ্য সূত্রে জানা গিয়েছে, তাতে মোট ২.৪৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গত ২০২৪-এ ৬.৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল এর জন্য। এদিকে কী কারণে এই 'সেলফি পয়েন্ট', এর উদ্দেশ্যই বা কী, সে বিষয়ে কেন্দ্রের শিক্ষা মন্ত্রক এখনও পর্যন্ত সঠিক ভাবে বোঝাতে পারেনি। তবে শিক্ষাবিদরা এই প্রকল্পকে 'এক দিনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কর্মসূচী' বলে কটাক্ষ করেছেন।

অন্যদিকে, বাড়ছে বেসরকারি কর্পোরেট সিএসআর পুষ্ট অনুদান। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৫-২৬-র অর্থবর্ষে এই খাতে কেন্দ্রীয় বাজেটের বরাদ্দ ২৩.২ শতাংশ হারে কমানো হয়েছে। ২০২১ থেকে কেন্দ্রের শিক্ষা দপ্তরের নেওয়া 'ন্যাশনাল ট্যালেন্ট সার্চ এগজামিনেশন' স্থগিত রাখা হয়েছে। তার ফলে প্রায় দু হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, "দেশে হীরক রাজার রাজত্ব চলছে। আত্মপ্রচারের মতো অহেতুক বিষয়ে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। অন্য দিকে শিক্ষার নানা গুরুতর ক্ষেত্রে ব্যয় কমানো হচ্ছে, নানা স্কলারশিপ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আসলে প্রান্তিক অংশের ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া করার সুযোগ, স্বাধীন ভাবে ভাবনা চিন্তা করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে"।

এনিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, "পরীক্ষা পে চর্চা বা এক্সাম ওয়ারিয়র্স'র মতো প্রকল্প দিয়ে শিক্ষার প্রকৃত পরিস্থিতির অবস্থা চুনকাম করা যাবে না। শিক্ষার প্রতি মোদী সরকারের টানা অবহেলায় দেশের ভবিষ্যৎ আজ সঙ্কটের মুখোমুখি"।

মূলত, সম্প্রতি এক সরকারি রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশে অনেকটাই পিছিয়েছে শিক্ষার মান। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রাথমিক স্কুলে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের ৪০ শতাংশের অক্ষরজ্ঞান নেই, ৫০ শতাংশ একেবারে সহজ অক্ষরও পড়তে পারে না, ৬২ শতাংশের ঋতুজ্ঞান নেই, ৪৪ শতাংশ সহজ বাক্যও পড়তে পারে না। মাধ্যমিক স্তরের অবস্থা আরও শোচনীয়।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in