কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার রাজ্যে ‘সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বাহিনী’ (Anti-Communal Force) গঠনের উদ্যোগ নিতেই আপত্তি এলো বিজেপির দিক থেকে। কর্ণাটক সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক স্পর্শকাতর অঞ্চল বলে চিহ্নিত উপকূলীয় কর্ণাটক অঞ্চলে এই বাহিনী গঠনের কথা ভাবা হয়েছে। যার উত্তরে বিজেপি জানিয়েছে, হিন্দুত্বকে চেপে রাখার জন্যেই এই বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে।
কর্ণাটকে ২০২২ সালে খুন হন মহম্মদ ফাজিল নামের এক ব্যক্তি। যে খুনের প্রধান আসামী বজরঙ দল সদস্য সুহাস শেট্টী চলতি মাসের ১ তারিখ রাতে ম্যাঙ্গালুরুর বাজপে অঞ্চলে খুন হন। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে মহম্মদ ফাজিলের মৃত্যুর পর তার পরিবারকে যে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল তার থেকেই ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে সুপারি কিলার লাগিয়ে সুহাস শেট্টীকে খুন করা হয়েছে। যদিও মহম্মদ ফাজিলের পরিবার সুহাসের খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে। এখনও পর্যন্ত সুহাস হত্যাকান্ডে মহম্মদ ফাজিলের ভাই সহ মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এই ঘটনার পরেই রাজ্যের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ বাহিনী গড়ার কথা বলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরা। এই বাহিনী কর্ণাটকের উপকূলীয় অঞ্চলে সমাজবিরোধী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে বলেও তিনি জানান। কারণ সুভাষের মৃত্যুর পরেই ম্যাঙ্গালুরু অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই প্রতিবাদ জানায় বিজেপি। প্রাক্তন মন্ত্রী এবং কারকালা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক ভি সুনীল কুমার এই প্রসঙ্গে বলেন, কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই ফাজিলের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয় এবং সেই টাকা দিয়ে ফাজিলের পরিবার সুপারি কিলার নিযুক্ত করে সুভাষ শেট্টীকে খুন করে।
এরপরেই বিজেপি নেতা প্রশ্ন করেন, এভাবে সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে আর কত হত্যা করা হবে? তিনি আরও দাবি করেন, প্রথমত সরকারি ক্ষতিপূরণের ওই টাকা সুদসমেত ফেরত নেওয়া উচিত। এটাই এসিএফ-এর প্রথম কাজ হওয়া উচিত। অন্যথায় এটা প্রমাণিত হবে যে এসিএফ তৈরি করা হচ্ছে শুধুমাত্র হিন্দুত্বকে আটকানোর জন্য।
ক্ষতিপূরণের টাকা এভাবে ব্যবহারের কথা জানেন না বলেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। রাজ্য বিধানসভার স্পিকার ইউ টি খাদের এক বিবৃতিতে জানান, ফাজিলের পরিবার তাঁকে জানিয়েছে জানিয়েছে এই হত্যাকান্ডের বিষয় তারা অবহিত নন বা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে তারা যুক্ত নন।
যদিও কর্ণাটকের বিরোধী দলনেতা আর অশোক এই ঘটনায় স্পিকারের কড়া সমালোচনা করে বলেন, কাদের সাহেব আবার কবে থেকে বিচারক হয়ে গেলেন? কীভাবে তাঁর মত একজন প্রভাবশালী তদন্তের আগেই একজন অভিযুক্তকে ক্লিন চিট দিয়ে দিচ্ছেন? ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে সিদ্দারামাইয়া সরকার সুভাষ শেট্টীর হত্যাকান্ড চাপা দিতে চাইছে। বিজেপি নেতার এই অভিযোগের পরে স্পিকার জানান, শেঠির হত্যাকাণ্ডকে সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে এবং কিছু স্থানীয় নেতা পরিস্থিতির রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন, এই উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মিডিয়া চ্যানেলগুলিতে তিনি বিবৃতি দিয়েছেন এবং তিনি কোনও পক্ষ নেননি।
বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য এই ঘটনার কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছেন এবং বলেছেন, সুহাস শেঠি হত্যার তদন্ত এনআইএ-র কাছে পাঠানো হোক। তাঁর মতে, “এই মর্মান্তিক ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় - এটি কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কর্ণাটকে হিন্দু কর্মীদের বারবার হত্যার একটি নিপুণ পরিকল্পনার অংশ।
কে এই সুহাস শেট্টী?
কর্ণাটকের উপকূলীয় অঞ্চলের রাজনীতিতে বিতর্কিত ব্যক্তি ছিলেন বজরঙ দলের সদস্য সুহাস শেট্টী। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে, তার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ম্যাঙ্গালুরু এবং দক্ষিণ কান্নাডায় পাঁচটি মামলা আছে। তিনি ২০২২-এর মহম্মদ ফাজিল হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন। ২০২২-এর ২৬ জুলাই বিজেপি যুব কর্মী প্রবীণ নেট্টারু হত্যার দু’দিনের মধ্যে খুন হয়েছিলেন মহম্মদ ফাজিল।
চলতি বছরের ১ মে রাতে রাস্তা দিয়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে যাচ্ছিলেন সুহাস। এই সময়েই প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে হত্যা করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। শেঠি হত্যার পর, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং অন্যান্য হিন্দু গোষ্ঠীগুলি ৩ মে, শুক্রবার দক্ষিণ কন্নড় জুড়ে বনধের ডাক দেয়। হাম্পানকট্ট, সুরথকাল, উল্লাল এবং পুত্তুরের মতো এলাকায় বনধ পালিত হয়। কেএসআরটিসি এবং বেসরকারি বাসগুলিতে পাথর ছোঁড়ার ঘটনাও ঘটে বলে জানা গেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন