

নির্বাচনের আগে উত্তপ্ত বিহার। খুন প্রশান্ত কিশোরের দল জন সূরজ পার্টির কর্মী। খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মোকামা বিধানসভা কেন্দ্রের জেডিইউ প্রার্থী অনন্ত কুমার সিং-কে। তাঁর বিরুদ্ধে জন সূরজ পার্টির কর্মী দুলারচাঁদ যাদবকে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বিহারে নির্বাচনের আগে রীতিমতো চাপে রয়েছে নীতিশ কুমারের জেডিইউ।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৩০ অক্টোবর। জন সূরজ পার্টির প্রার্থী প্রিয়দর্শী পিযূষের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়েছিলেন দুলারচাঁদ যাদব। এমন সময় অন্যদিক থেকে অনন্ত সিং-র মিছিলও আসে। দু'পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। অভিযোগ দুলারচাঁদ যাদবকে লক্ষ্য করে গুলি চালান অনন্ত সিং। এমনকি এখানে না থেমে, তাঁকে মারধর করা হয় এবং তাঁর উপর দিয়ে গাড়িও চালিয়ে দেওয়া হয়।
মোকামা অঞ্চলের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন ৭৫ বছর বয়সী নিহত দুলারচাঁদ। তাঁর বাড়ি তাতার গ্রামে। একসময় তিনি লালুপ্রসাদ যাদবের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পরে প্রশান্ত কিশোরের দল জন সূরজ পার্টিতে যোগ দেন।
শনিবার রাতে পাটনা পুলিশ অনন্ত সিং এবং তাঁর দুই সহযোগী মণিকান্ত ঠাকুর ও রঞ্জিত রামকে গ্রেফতার করে। সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (এসএসপি) কার্তিকেয় কে শর্মা বলেন, "সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেখা গেছে যে সংঘর্ষের সময় অনন্ত সিং ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয়েছে"।
ওই পুলিশ আধিকারিক আরও জানান, তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। জড়িত থাকা অন্যান্য ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে তল্লাশি জারি রয়েছে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৬টি এফআইআর দায়ের হয়েছে। ঘটনার সময় কার কী ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়নি।
৩০ অক্টোবর ঘোষায়রী থানায় এফআইআর দায়ের করেন নিহত দুলারচাঁদ যাদবের নাতি নীতজ কুমার। তিনি অভিযোগে জানান, ৩০ তারিখ বিকেল ৩.৩০ টার দিকে মোকামার বাসওয়ান চক গ্রামের কাছে জন সূরজ পার্টির প্রার্থী প্রিয়দর্শী পীযূষের সমর্থনে প্রচার করছিলেন দুলারচাঁদ। অনন্ত সিং, তাঁর বেশ কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে দুলারচাঁদকে গালিগালাজ দিতে শুরু করেন। যাদব আপত্তি জানাতেই তাঁকে জোর করে গাড়ি থেকে টেনে নামান রাজবীর সিং এবং কর্মবীর সিং নামে দুই ব্যক্তি। তারপরই অনন্ত সিং খুনের উদ্দেশ্যে তাঁর কোমর থেকে একটি পিস্তল বের করে দুলারচাঁদকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালান। বাম গোড়ালিতে চোট পান নিহত ব্যক্তি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, যাদব মাটিতে পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে, ছোটন সিং এবং সঞ্জয় সিং নামের দুই ব্যক্তি লোহার রড দিয়ে তাঁর পা, পিঠ এবং মাথায় আঘাত করে। পরে পালাতে গেলে দুলারচাঁদকে এসইউভি দিয়ে পিষে দেওয়া হয়। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) ২০২৩ এর ধারা ১০৩ (হত্যা) এবং ৩(৫) (সাধারণ উদ্দেশ্য) এবং অস্ত্র আইনের ধারা ২৭ এর অধীনে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
এই অনন্ত সিং 'বাহুবলী' নেতা হিসেবে বিশেষ পরিচিত। মোকামার রাজনীতিতে তিনি 'ছোটে সরকার' নামেও পরিচিত। একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ৫০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। যার মধ্যে খুন এবং অপহরণের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালে পুলিশি অভিযানের পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে তাঁর বাসভবনে তল্লাশি চালিয়ে একটি একে-৪৭ রাইফেল এবং গ্রেনেড বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ২০২২ সালে তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল কিন্তু প্রমাণের অভাবে ২০২৪ সালে পাটনা হাইকোর্ট তাঁকে খালাস করে।
নির্বাচনের আগে এই খুনের ঘটনা নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র কটাক্ষ করেন লালু পুত্র তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "বিহারে মহা জঙ্গলরাজ চলছে। বিহারে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গুলি চলছে। তিনি (নরেন্দ্র মোদী) কি এগুলো দেখতে পাচ্ছেন না?"
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন