
ফের বিতর্কে জড়ালেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি। অভিযোগ, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে এসে পড়ুয়াদের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বললেন। ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এমনকি রবির অপসারণের দাবিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার। সেদিন মাদুরাইয়ে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল আর এন রবি। সেখানেই বক্তৃতা দিতে গিয়ে আচমকা পড়ুয়াদের ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বলেন। ‘কম্বা রামায়ণ’-এর রচয়িতাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েই এই আহ্বান করেন তিনি।
ভাইরাল ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আসুন, আমরা আজকে শ্রী রামের এক জন মহান ভক্তকে শ্রদ্ধা জানাই। আমিও বলব, তোমরাও সকলে জয় শ্রীরাম বলো!” সভাঘরে উপস্থিত পড়ুয়ারা তাঁর কথা শুনে তিনবার ‘জয় শ্রীরাম’ বলেন। এরপরেই রবির মন্তব্য নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, কেন এমন ভাবে সকলকে জয় শ্রীরাম বলার জন্য আহ্বান করলেন তিনি?
এন রবির এহেন আচরণের পর তাঁর অপসরণের দাবিতে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছে স্টেট প্ল্যাটফর্ম ফর কমন স্কুল সিস্টেম-তামিলনাড়ু (এসপিসিএসএস-টিএন)। রবিবার একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, “রবি সংবিধানের ১৫৯ অনুচ্ছেদের অধীনে শপথ নিয়েছেন। তাঁর শপথে তিনি নিশ্চিত করেছেন, তিনি তাঁর সর্বোত্তম ক্ষমতা ব্যবহার করে সংবিধান ও আইন সংরক্ষণ করবেন এবং তামিলনাড়ুর জনগণের সেবা ও কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করবেন। একটি নির্দিষ্ট ধর্মের ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করে এবং শিক্ষার্থীদের একই কথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করতে বলে তিনি সেই শপথ ভেঙেছেন”।
অন্যদিকে, রাজ্যপালের এহেন আচরণের পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। তাঁকে আরএসএস-এর মুখপাত্র বলে অভিহিত করেছে সেরাজ্যের শাসক দল ডিএমকে। ডিএমকের মুখপাত্র ধরণীধরনের মতে, “এটা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের পরিপন্থী”। তাঁর প্রশ্ন, “রাজ্যপাল কেন বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করছেন? তিনি কেন এখনও পদত্যাগ করলেন না? উনি আরএসএসের মুখপাত্র। আমরা জানি কী ভাবে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে তাঁর অবস্থান দেখিয়ে দিয়েছে”।
অন্যদিকে, রাজ্যপালের সমালোচনা করেছেন তামিলনাড়ুর কংগ্রেস বিধায়ক আসান মৌলানা। তিনি বলেছেন, “আরএন রবি রাজ্যের সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন। কিন্তু ওই পদে থেকে তিনি এক জন ধর্মীয় নেতার মতো কথা বলছেন, যা সমস্যা তৈরি করতে পারে। ভারতে বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন ভাষা এবং বিভিন্ন সম্প্রদায় রয়েছে। সেখানে রাজ্যপালের এই ধরনের আচরণ বৈষম্যকে উৎসাহিত করে”। কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যপাল বিজেপি এবং আরএসএসের প্রচারক হয়ে কাজ করছেন।
উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগেই সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছেন রবি। তামিলনাড়ু সরকার তাঁর ভূমিকা এবং কার্যকলাপ নিয়ে মামলা করেছিল। বিধানসভায় পাস হওয়া রাজ্য সরকারের ১০টি বিল দীর্ঘদিন আটকে রেখেছেন রাজ্যপাল। এই নিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় তামিলনাড়ু সরকার। সেই মামলার শুনানি ছিল মঙ্গলবার। শুনানিতে বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ জানায়, রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া দীর্ঘদিন বিল ঝুলিয়ে রাখা বৈধ নয়। বিলে কোনও আইনি বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো যেতে পারে। বিলটি নতুন করে আবার বিধানসভায় পাস হলে, তাতে রাজ্যপাল বাধ্য সম্মতি দিতে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন