
উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্য এবং রাজধানী দিল্লিতে ভয়াবহ বন্যার প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার অনিয়ন্ত্রিত অবৈধভাবে গাছ কাটা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আদালত জানিয়েছে, পরিবেশ আইনগুলি প্রকাশ্যে লঙ্ঘন করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে কেন্দ্র ও চার রাজ্যকে নোটিস জারি করেছে।
প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি কে ভিনোদ চন্দ্রনের ডিভিশন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই বিষয়ে শুনানি করে। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা এখন অত্যন্ত জরুরি। প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, “পাঞ্জাবের বিস্তীর্ণ এলাকা ও গ্রাম বন্যায় ভেসে গিয়েছে। উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য থাকা আবশ্যক।”
শিমলার নদীগুলোতে ভাসমান বিপুল পরিমাণ কাঠের গুঁড়ির বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের উল্লেখ করে আদালত সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতাকে সরকার থেকে দ্রুত নির্দেশিকা আনতে বলা হয়েছে। শুনানির সময় মেহতা মন্তব্য করেন, “দুর্ভাগ্যবশত আমরা প্রকৃতির সঙ্গে অনেক খেলেছি। এখন প্রকৃতি তার জবাব দিচ্ছে।”
উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্য বর্তমানে ভয়াবহ সঙ্কটে জর্জরিত। হিমাচল প্রদেশে ১৯৪৯ সালের পর আগস্টে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভয়াবহ ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, পরিকাঠামো ধ্বংস করেছে এবং ৩৪০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে।
উত্তরাখণ্ডেও টানা বৃষ্টিতে গঙ্গা, অলকানন্দা ও মন্দাকিনী নদী বিপদসীমার কাছাকাছি বা উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৮০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন, বহু মানুষ নিখোঁজ। জম্মু-কাশ্মীরে রামবন ও রেয়াসি জেলায় একের পর এক মেঘভাঙা বৃষ্টি আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস ডেকে এনেছে। ফলে হাজারো মানুষ আটকে পড়েছেন এবং বৈষ্ণোদেবী যাত্রাও বারবার বন্ধ রাখতে হয়েছে।
পাঞ্জাব প্রায় চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এটিকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ ঘোষণা করেছে। ১,৪০০-র বেশি গ্রাম প্লাবিত, ৩.৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৩.৭ লক্ষ একর কৃষিজমি জলের নিচে তলিয়ে গিয়েছে। কৃষি অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির মুখে। ইতিমধ্যেই ৪০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজধানী দিল্লিতেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। হরিয়ানার হাতনিকুন্ড ব্যারাজ থেকে টানা জল ছাড়ার ফলে যমুনা নদী বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
উত্তর ভারতের এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। অরক্ষিত পাহাড়ি অঞ্চলে লাগামহীন উন্নয়ন কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা সকলেই এখন দেখতে পাচ্ছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন