
পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) ব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে জিএসটি কাউন্সিল। বুধবার জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ নতুন জিএসটি-র হার ঘোষণা করেছেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চার স্ল্যাবের কর কাঠামো ভেঙে দুই স্ল্যাবে ভাগ হবে জিএসটি— ৫ শতাংশ ও ১৮ শতাংশ। ১২ এবং ২৮ শতাংশ তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বিলাসবহুল গাড়ি, সফট ড্রিঙ্কস, কার্বনযুক্ত পানীয় ও তামাকজাত দ্রব্যের মতো কিছু পণ্যের জন্য আলাদা ৪০ শতাংশ হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন হারে জিএসটি কার্যকর হবে। কেন্দ্র সরকারের দাবি, এর ফলে একদিকে সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ কমবে, অন্যদিকে বিলাসপণ্যের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে রাজস্বও বাড়বে। অর্থনীতিবিদদের মতে, আমেরিকার শুল্কনীতির ধাক্কা সামাল দিতে ও দেশীয় খরচ চাঙ্গা করতেই এমন পদক্ষেপ।
নতুন ব্যবস্থায় কোন কোন পণ্য সস্তা হল? কোন কোন জিনিসের দাম বাড়ল? দেখে নিন একনজরে -
কী কী হবে সস্তা?
খাদ্য ও পানীয়:
রুটি, পরোটা, পনির, দুধ, ব্রেড, খাকরার মতো খাবারে ৫ শতাংশ জিএসটি ছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাখন, ঘি, বাদাম, নামকিন, ডাবের জল, জ্যাম, বিস্কুট, কর্নফ্লেক্স-সহ বেশিরভাগ প্যাকেটজাত খাবারের কর ১২ শতাংশ থেকে নামছে ৫ শতাংশে। বাদাম, খেজুর, আনারস, অ্যাভোকাডোর মতো ফলের উপরেও একই কর প্রযোজ্য।
পশুচর্বি, সসেজ, সংরক্ষিত বা রান্না করা মাংস, মাছ, নুডল্স, স্প্যাগেটি এবং বিভিন্ন সব্জির দাম কমছে। জিএসটি এ সব ক্ষেত্রেও ১২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামছে।
এছাড়া আইসক্রিম ও পেস্ট্রির মতো পণ্যের ক্ষেত্রেও দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
গৃহস্থালি সামগ্রী ও টয়লেট্রিজ:
শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, সাবান, হেয়ার অয়েল, ট্যালকম পাউডার— সবই এখন থেকে মাত্র ৫ শতাংশ হারের মধ্যে আনা হয়েছে। কমবে টেবিলওয়্যার, রান্নার সরঞ্জাম, ছাতা, সাইকেল, বাঁশের আসবাবপত্র, চিরুনির দামও।
ইলেকট্রনিক্স ও সরঞ্জাম:
এসি, ডিশওয়াশার, টিভির মতো জিনিসে কর কমে হচ্ছে ১৮ শতাংশ। সিমেন্টের করও ২৮ থেকে নেমেছে ১৮ শতাংশে। যার ফলে গৃহনির্মাণ খরচ কিছুটা হলেও কমবে।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা:
জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ডায়াগনস্টিক কিট, থার্মোমিটার, চশমার মতো পণ্যে হার ৫ শতাংশ ছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ ছাড়া, যাবতীয় জীবনবীমা এবং স্বাস্থ্য বীমার উপর থেকে জিএসটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
খাতা, চার্ট, পেন্সিল, মানচিত্র-সহ প্রায় সব শিক্ষাসামগ্রীও করমুক্ত করা হয়েছে।
পরিবহন ও যানবাহন:
৩৫০ সিসি পর্যন্ত বাইক, ছোট গাড়ি, হাইব্রিড গাড়িতে কর নামছে ১৮ শতাংশে। ইলেকট্রিক গাড়িতে কর ৫ শতাংশে থাকবে। অটো কম্পোনেন্ট ও যন্ত্রাংশের উপর কর কমছে।
কৃষি খাত:
ট্র্যাক্টর, হারভেস্টার, পাম্প, সার, বায়োপেস্টিসাইড— সবকিছুতেই কর নামছে ৫ শতাংশে। কৃষকদের জন্য এটাকে বড় স্বস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পরিষেবা খাত:
হোটেল রুম ভাড়া (৭৫০০ টাকা পর্যন্ত) ও ইকোনমি ক্লাস বিমানের টিকিটে কর থাকবে মাত্র ৫ শতাংশ। সেলুন, জিম, যোগা সেন্টার-এ কর নেমে আসছে ১৮ থেকে ৫ শতাংশে।
দাম বাড়ছে কিসের?
সফট ড্রিঙ্কস ও পানীয়:
কোক, পেপসি, অন্যান্য কার্বনেটেড ও কার্বনযুক্ত পানীয়ের দাম বাড়ছে। ২৮ শতাংশ থেকে জিএসটি করা হচ্ছে ৪০ শতাংশ।
বিলাসবহুল গাড়ি ও যানবাহন:
১২০০ সিসি-র বেশি ইঞ্জিনের গাড়ি, ৩৫০ সিসি-র বেশি বাইক, ৪ মিটারের বেশি লম্বা গাড়ি, ইয়চ, ব্যক্তিগত বিমান, রেসিং কারে কর লাগবে ৪০ শতাংশ।
তামাকজাত দ্রব্য:
সিগারেট, চুরুট এবং তামাকজাত যাবতীয় পণ্যের উপর ৪০ শতাংশ হারে জিএসটি নেওয়া হবে।
বিনোদন খাত:
ক্যাসিনো, রেস ক্লাব, লটারি, অনলাইন মানি গেমিং ও আইপিএল টিকিটেও কর ধার্য হবে ৪০ শতাংশ।
কয়লার দাম বাড়ছে। পাঁচ থেকে ১৮ শতাংশ হচ্ছে কয়লার উপর জিএসটি।
অর্থমন্ত্রকের দাবি, এই সংস্কারের ফলে মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সস্তা হওয়ায় গ্রামীণ ও শহুরে উভয় বাজারে চাহিদা বাড়বে। অন্যদিকে, বিলাসবহুল পণ্য ও পরিষেবায় বাড়তি কর আরোপ করে সরকার রাজস্ব বাড়াতে চায়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের ভোগভিত্তিক অর্থনীতিতে এ এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। তবে সফট ড্রিঙ্কস ও বিলাসপণ্যে বাড়তি কর শিল্পখাতে চাপ তৈরি করতে পারে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন