
আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মেরুকরণের রাজনীতির খেলায় নামলো বিজেপি। শনিবার নির্বাচনী জনসভায় গিয়ে মুসলিমদের 'নমক হারাম' বা 'অকৃতজ্ঞ' বলে অভিহিত করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। ভিডিও ভাইরাল হতেই বিরোধীরা তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া এবং পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্যে শাসক এনডিএ জোট অস্বস্তিতে পড়লেও কিছু এনডিএ নেতা তাঁকে সমর্থন করেছেন।
শনিবার অরওয়াল জেলায় বিজেপির নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় বেগুসরাইয়ের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী গিরিরাজ সিং দাবি করেন, যাঁরা কেন্দ্রের কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছেন, তাঁদের নৈতিকভাবে বিজেপিকে ভোট দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে তিনি মুসলিম ভোটারদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তাঁর দাবি, এরা 'নমক হারাম'।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এক মুসলিম ধর্মগুরুর সঙ্গে কথোপকথনের কাহিনি বর্ণনা করছেন। যেখানে তিনি বলেন, “আমি এক মৌলবীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর কাছে আয়ুষ্মান ভারত কার্ড আছে কি না। তিনি বললেন, ‘আছে।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটি দেওয়ার সময় কি ধর্ম দেখে দেওয়া হয়েছিল? বললেন, ‘না’। পরে জিজ্ঞাসা করলাম, আমাকে ভোট দিয়েছেন? তিনি প্রথমে বললেন, ‘হ্যাঁ’, কিন্তু তাঁকে ইশ্বরের নামে শপথ করতে বলতেই বললেন, ‘না’। তখন আমি বলেছিলাম, যে সাহায্য পায় অথচ স্বীকার করে না, সে নমক হারাম। মুসলিমরা সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা নেন, কিন্তু আমাদের ভোট দেন না।"
তিনি আরও বলেন, “আমি ওই মৌলবী সাহেবকে বলেছিলাম, নমক হারামদের ভোট আমার দরকার নেই।” এরপর সভায় উপস্থিত জনতাকে তিনি ‘নমক হারাম’ শব্দটি উচ্চারণ করার জন্য উস্কে দেন। যা অনেকের কাছে ২০২০ সালে অনুরাগ ঠাকুরের বিতর্কিত নির্বাচনী স্লোগানের স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে।
ভিডিওটি ভাইরাল হতেই গিরিরাজের তীব্র সমালোচনা শুরু করেছেন বিরোধীরা। শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী)-র নেতা সঞ্জয় রাউত প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি কেউ আপনাকে ভোট না দেয়, তাহলে সে নমক হারাম? তাহলে যে সমস্ত হিন্দু বিজেপিকে ভোট দেয় না, তাঁদের কী বলবেন?” এরপরেই তিনি দাবি করেন, ওনাকে যত দ্রুত সম্ভব এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং পদত্যাগ করা উচিত।
বিহার কংগ্রেস মুখপাত্র সুরেন্দ্র রাজপুত গিরিরাজকে “মানসিকভাবে অস্থিতিশীল” বলে কটাক্ষ করেন। তাঁর কথায়, “বিজেপির এখন আর কোনও রাজনৈতিক ইস্যু নেই, তাই শুধু হিন্দু-মুসলিমের রাজনীতি করছে।”
তীব্র সমালোচনার মুখে রবিবার গিরিরাজ সিং জানান, তাঁর উদ্দেশ্য কাউকে অপমান করা নয়, বরং দেখানো যে মোদী সরকারের প্রকল্পগুলি ধর্মনিরপেক্ষভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত। তিনি বলেন, “ইসলামে বিনা পয়সার খাবার খাওয়াকে হারাম বলা হয়। অথচ তাঁরা বিনামূল্যের রেশন নিচ্ছেন, ঘর পেয়েছেন, শৌচালয় পেয়েছেন— ধর্ম দেখে কি কাউকে বঞ্চনা করা হয়েছে?”
অন্যদিকে, জোটসঙ্গী জেডিইউ বিষয়টি নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। দলের মুখপাত্র রাজীব রঞ্জন বলেন, “বিহারের মানুষ বুদ্ধিমান। তাঁরা এমন মন্তব্যের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন। মুসলিম সমাজ নীতীশ কুমারের উপর আস্থা রাখে।”
তবে দলের আরেক নেতা নীরজ কুমার গিরিরাজের হয়ে সাফাই গেয়ে বলেন, “তিনি শুধু বোঝাতে চেয়েছেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কোনও ধর্মীয় বৈষম্য নেই। শব্দচয়ন নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু কথা বলার অধিকার সকলের আছে।”
উল্লেখ্য, গিরিরাজের বিতর্কিত মন্তব্য নতুন নয়। এর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, “যাঁরা মোদীর বিরোধিতা করেন, তাঁদের পাকিস্তানে পাঠানো উচিত।” পরে তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসাকে “সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর” বলেও আখ্যা দেন। একাধিকবার তিনি মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দেশের নিরাপত্তার জন্য “হুমকি” বলে মন্তব্য করেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন