
গত পাঁচ বছরে ৩০০ শতাংশ বেড়েছে ৫০০ টাকার জাল নোট। একই ভাবে বেড়েছে ২০০০ টাকার জাল নোটের সংখ্যাও। লোকসভায় শীতকালীন অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে এই তথ্য উঠে এসেছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সব মহল। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে তড়িঘড়ি নোট বন্দি করা হয়েছিল কেন? এর পিছনে কী শুধুই রাজনৈতিক প্রচার ছিল?
ডিএমকে সাংসদ টি এম সেলভাগানাপতির করা প্রশ্নের উত্তরে সংসদে এই তথ্য জানিয়েছেন অর্থ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী।
সংসদে পেশ করা সরকারি তথ্য অনুসারে জাল ৫০০ টাকার নোটের সংখ্যা ২০১৯ আর্থিক বছরে ছিল ২১,৮৬৫ মিলিয়ন। যা ২০২৩ আর্থিক বছরে বেড়ে হয়েছে ৯১,১১০ মিলিয়ন। ২০২৪ আর্থিক বছরে তা কমে হয়েছে ৮৫,৭১১ মিলিয়ন।
২০২২ আর্থিক বছরে জাল ৫০০ টাকার নোটের সংখ্যা সবথেকে বেশি বৃদ্ধি দেখা গেছে। শতকরার হিসেবে যা ১০২ শতাংশ। ২০২১ আর্থিক বছরে ৩৯,৪৫৩ মিলিয়ন থেকে ২০২২ আর্থিক বছরে বেড়ে হয়েছে ৭৯,৬৬৯ মিলিয়ন।
একইভাবে ২০০০ টাকার জাল নোটের বৃদ্ধি ঘটেছে ১৬৬ শতাংশ। ২০২৩ আর্থিক বছরে যা ছিল ৯,৮০৬ মিলিয়ন ২০২৪-এ তা বেড়ে হয়েছে ২৬,০৩৫ মিলিয়ন।
যদিও সরকারি তথ্য অনুসারে ২০১৯ আর্থিক বছরে জাল নোটের সংখ্যা ছিল ৩,১৭,৩৮৪ মিলিয়ন। যা ২০২৪-এ কমে হয়েছে ২,২২,৬৩৯ মিলিয়ন।
অর্থমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে,
২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ২০০০ এবং ৫০০ টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে যথাক্রমে ২১,৮৪৭ ও ২১,৮৬৫।
২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ২০০০ এবং ৫০০ টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে যথাক্রমে ১৭,০২০ ও ৩০,০৫৪।
২০২০-২১ অর্থবর্ষে ২০০০ এবং ৫০০ টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে যথাক্রমে ৮,৭৯৮ ও ৩৯,৪৫৩।
২০২১-২২ অর্থবর্ষে ২০০০ এবং ৫০০ টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে যথাক্রমে ১৩,৬০৪ ও ৭৯,৬৬৯।
২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ২০০০ এবং ৫০০ টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে যথাক্রমে ৯,৮০৬ ও ৯১,১১০।
২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ২০০০ এবং ৫০০ টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে যথাক্রমে ২৬,০৩৫ ও ৮৫,৭১১।
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর মোদী সরকার আচমকাই ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বার্তা দেন, ডিজিটাল লেনদেন বাড়িয়ে জাল নোট ও কালো টাকার রমরমা বন্ধ করা হবে। কিন্তু সোমবার লোকসভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহত্মা গান্ধী (নতুন) সিরিজের ৫০০ টাকার জাল নোট ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই ভাবে ২০০০ টাকার জাল নোট প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে, এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর মোদী সরকারের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা পবন খেরা। তিনি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোষ্ট করে লেখেন, ‘গত আট বছরে বিভিন বিশ্লেষণে নোটবন্দিকে ব্যর্থ তকমা দেওয়া হয়েছে। আশঙ্কা করা হয়েছে এর সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রভাব নিয়ে। সরকারি তথ্যে সেটাই প্রমাণিত হল।‘
সূত্র হিসেবে লোকসভার কথা উল্লেখ করে পবন খেরা লিখেছেন, “সংসদে পেশ করা সরকারি তথ্য অনুসারে সারা দেশে জাল ₹৫০০ এবং ₹২০০০ নোটের বিশাল বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে:
ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় শনাক্ত করা জাল ₹৫০০ (মহাত্মা গান্ধী ছবি দেওয়া নতুন সিরিজ) নোটের সংখ্যা ২০১৮-১৯ সালে ২১৮৬.৫ কোটি থেকে বেড়ে ২০২৩-২৪-এ ৮৫৭১.১ কোটি হয়েছে৷ যা পাঁচ বছরে প্রায় ৩০০% বেড়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে। ২০২২-এ জাল নোট সবথেকে বেশি বেড়েছে। ২০২১-২২-এর ৩,৯৪৫.৩ কোটি থেকে বেড়ে তা হয়েছে ৭,৯৬৬.৯ কোটি। অর্থাৎ ১০২% বৃদ্ধি।
২০০০ টাকার জাল নোটও ২০২৪-এ উল্লেখযোগ্যভাবে ১৬৬% বেড়েছে। ২০২৩-এ ৯৮০.৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে তা হয়েছে ২,৬০৩.৫ কোটি টাকা।”
ওই এক্স বার্তায় তিনি আরও লেখেন, সরকারের নিজস্ব পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে তাদের এই ভুল নীতি কীভাবে উল্টে সরকারকে প্রত্যাঘাত করেছে। যার ফলে শুধু অর্থনীতিই নয়, দেশের অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীর জীবিকাও ধ্বংস হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন