
ফের প্যারোলে মুক্তি পেলেন ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ডেরা সাচ্চা সৌদা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিং। এবার ২১ দিনের জন্য জেল থেকে বেরিয়েছেন তিনি। ২০২০ সালের পর থেকে এই নিয়ে ১৩ বার জেল থেকে ছাড়া পেলেন তিনি।
জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার রাম রহিম সিরসার ডেরা সদর দপ্তরে যাচ্ছেন এবং পুরো ছুটির সময়টুকু সেখানেই কাটাবেন। ২০১৭ সালের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার তিনি ডেরায় ফিরছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেল কর্মকর্তা বলেন, “এই প্রথম তিনি পুরো ফার্লোর সময় ডেরাতেই থাকবেন।”
গুরমিত রাম রহিমের এই প্যারোলে মুক্তি পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। অভিযোগ, বারবার দেখা গেছে, বিভিন্ন নির্বাচন—রাজ্যসভা, বিধানসভা কিংবা পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগেই তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩০ দিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি পান রাম রহিম। ওই সময়ই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন ছিল। ওই সময় তিনি ১০ দিন সিরসায় এবং বাকি সময় বাগপতের ডেরায় ছিলেন। এর আগে, গত বছর অক্টোবর মাসে হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের সময় ২০ দিনের প্যারোলে মুক্তি পান তিনি। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে রাজস্থান নির্বাচনের আগে ২৯ দিনের প্যারোল, জুলাই মাসে হরিয়ানার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ৩০ দিনের প্যারোলে ছুটি দেওয়া হয়েছিল।
২০২২ সালেও একাধিকবার তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। জুন মাসে হরিয়ানা পৌর কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে এবং অক্টোবর মাসে আদমপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এমনকি ২০২০ সালের অক্টোবরে, সোনেপতের বরোদা উপনির্বাচনের সময়ও তাকে দিনের বেলা গুরুগ্রামে অসুস্থ মায়ের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডেরা সাচ্চা সৌদার বড় ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে বিশেষত হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে। বহু বছর ধরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়ার জন্য আগ্রহী। বিশেষত নির্বাচনের সময় এই ডেরা প্রধানের 'আর্শীবাদ’ পেতে নেতারা ডেরায় যান—এ দৃশ্য নতুন নয়।
এমন এক বিতর্কিত ব্যক্তিকে বারবার ভোটের মুখে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস ও আপ নেতাদের মতে, “সরকার এই প্যারোল ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। আইনের শাসনের এই অপমান গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।”
প্রসঙ্গত, গুরমিত রাম রহিম ২০০২ সালে দুই মহিলা শিষ্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন এবং ২০১৭ সালে তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও, সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতি হত্যা মামলায়ও তিনি দোষী সাব্যস্ত। তাঁর বর্তমান ঠিকানা হরিয়ানার রোহতকের সুনিয়া জেল। ২০২০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৩২৬ দিন জেলের বাইরে ছিলেন রাম রহিম।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন