
দলিত হওয়ায় পিএইচডি প্রোগ্রামের প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করা সত্ত্বেও এক ছাত্রকে ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। জেনারেল ক্যাটাগরিতেই দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন শিবম সোনকার নামের ওই ছাত্র।
দ্য উইক-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ভর্তির সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর গত দু'দিন ধরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন শিবম সোনকার। বিএইচইউ প্রতিষ্ঠাতা মদন মোহন মালব্য, সংবিধান প্রণেতা ভীম রাও আম্বেদকর, ভগবান রামের ছবি এবং কিছু প্ল্যাকার্ড নিয়ে ধর্নায় বসেছেন তিনি। ছাত্রছাত্রী এবং রাজনীতিবিদরাও তাঁর সমর্থনে পথে নেমেছেন। শিবম ৮ বার NET পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
মালব্য সেন্টার ফর পিস রিসার্চে পিএইচডি অ্যাডমিশনের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন শিবম। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করার পরেও তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। এই বিভাগে মোট সাতটি আসন রয়েছে। মাত্র চারজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ আসনও খালি রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাখ্যা, সংরক্ষিত বা অসংরক্ষিত বিভাগে আসন অবস্থার যেকোনো পরিবর্তন কেবল কাউন্সেলিং সেশনের আগেই করা যেতে পারে। এখন আর সম্ভব নয়। যে তিনটি আসন খালি রয়েছে সেগুলো সবই জেনারেল ক্যাটাগরির জন্য। শিবম সোনকার দলিত, তাঁকে এই বিভাগে ভর্তি নেওয়া কীভাবে সম্ভব? অন্যদিকে সংরক্ষিত আসনের জন্য কোনও আবেদনপত্র না থাকায় সেগুলি ফাঁকাই রয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যাখ্যায় শিবম, তাঁর সমর্থনে আসা ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ কেউই সন্তুষ্ট নন।
শিবমের প্রশ্ন, এতে তাঁর দোষ কী? তাহলে তিনি দলিত বলেই কি তাঁকে ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছে?
বুধবার ধর্নারত শিবমের সাথে দেখা করতে আসেন উত্তর প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি অজয় রাই। তিনি বলেন, “শিক্ষার মন্দির হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও এটি এখন বৈষম্য ও অবিচারের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। একজন দলিত শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতির পরিপন্থী। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় এরকম ঘটনা লজ্জাজনক।“
নিজের এক্স হ্যান্ডেলেও এই নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। যেখানে বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি লেখেন, “শিবমকে কেন পিএইচডি-তে ভর্তি নিচ্ছে না, তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিজেপি শাসনামলে কি দলিত হওয়া কি অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে? আমাদের লড়াই দলিতদের শিক্ষা এবং সমতার অধিকার দেওয়ার জন্য। বিশ্বনেতা হওয়ার ঢাক বাজালেই দেশে বিকাশের শিখা জ্বলে না। এর জন্য, শিবমের মতো তরুণদের জন্য, একটু একটু করে পুড়তে হবে। ওঁদের জন্য লড়তে হবে।"
সমাজবাদী পার্টির এমএলসি আশুতোষ সিনহা এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লিখে এই বিষয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ভীম সেনার প্রধান এবং নাগিনার সাংসদ চন্দ্রশেখর আজাদ।
এদিকে সোনকারের পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে আন্দোলন শুরু করার হুমকি দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনক।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন