চিঠিতে বাংলাকে 'বাংলাদেশী ভাষা' উল্লেখ! 'নিরক্ষর' দিল্লি পুলিশকে সংবিধান পাঠের পরামর্শ CPIM-তৃণমূলের

People's Reporter: মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ওই চিঠিকে “কলঙ্কজনক, অপমানজনক, দেশবিরোধী এবং অসাংবিধানিক” বলে অভিহিত করেছেন।
দিল্লি পুলিশের সমালোচনা সিপিআইএম তৃণমূলের
দিল্লি পুলিশের সমালোচনা সিপিআইএম তৃণমূলেরগ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

দিল্লি পুলিশ (Delhi Police) একটি বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা ভাষাকে "বাংলাদেশি ভাষা" বলে উল্লেখ করায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল (TMC) থেকে সিপিআইএম (CPIM) সহ বাংলার রাজনৈতিক দলগুলি এর তীব্র নিন্দা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই চিঠিকে “কলঙ্কজনক, অপমানজনক, দেশবিরোধী এবং অসাংবিধানিক”বলে অভিহিত করেছেন। (সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এই চিঠির সত্যতা যাচাই করেনি পিপলস রিপোর্টার)

চিঠিটি দিল্লি পুলিশের তরফ থেকে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বঙ্গ ভবনে পাঠানো হয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়েছে, পুলিশ আটজন সন্দেহভাজন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করেছে। তাদের নথি 'বাংলাদেশি ভাষা’য় লেখা, যা হিন্দি কিংবা ইংরেজিতে অনুবাদের প্রয়োজন। যা নিয়েই সকলের আপত্তি। প্রশ্ন উঠছে কীভাবে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশী ভাষা’ হিসেবে উল্লেখ করল দিল্লি পুলিশ?

দিল্লি পুলিশের তীব্র সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এক্স মাধ্যমে তিনি লেখেন, “দেখুন ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ কীভাবে বাংলা ভাষাকে "বাংলাদেশী" ভাষা হিসেবে বর্ণনা করছে! বাংলা, আমাদের মাতৃভাষা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দের ভাষা, যে ভাষায় আমাদের জাতীয় সঙ্গীত রচিত, যে ভাষায় কোটি কোটি ভারতীয় কথা বলেন এবং লেখেন, যে ভাষা ভারতের সংবিধান দ্বারা পবিত্র এবং স্বীকৃত, তাকে এখন বাংলাদেশী ভাষা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে!!”

তিনি আরও লেখেন, “এটা কলঙ্কজনক, অপমানজনক, জাতীয়তাবিরোধী, অসাংবিধানিক!! এটা ভারতের সকল বাংলাভাষী মানুষকে অপমান করে। তারা এই ধরণের ভাষা ব্যবহার করতে পারে না যা আমাদের সকলকে হেয় ও অপমানিত করে। আমরা সকলের কাছ থেকে ভারতের বাঙালি-বিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তীব্র প্রতিবাদের আহ্বান জানাচ্ছি যারা ভারতের বাংলাভাষী জনগণকে অপমান করার জন্য এই ধরণের সংবিধান-বিরোধী ভাষা ব্যবহার করছে”।

দিল্লি পুলিশের চিঠির নিন্দা করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জিও। তিনি লেখেন, কয়েক মাস ধরে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী মানুষদের লক্ষ্য করে হয়রানি এবং আটক করা হচ্ছে। এই আবহে দিল্লি পুলিশ একটি সরকারি চিঠিতে বাংলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে “বাংলাদেশী ভাষা” হিসাবে উল্লেখ করেছে। এটি কেবল একটি ভুল নয়, এটি বাংলাকে অপমান করার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।

তিনি লেখেন, “এটি সংবিধানের ৩৪৩ অনুচ্ছেদ এবং অষ্টম তফসিলের সরাসরি লঙ্ঘন। “বাংলাদেশী” বলে কোনও ভাষা নেই। বাংলাকে বিদেশী ভাষা বলা কেবল অপমান নয় - এটি আমাদের পরিচয়, সংস্কৃতি এবং স্বত্বার উপর আক্রমণ। বাঙালিরা তাদের নিজস্ব মাতৃভূমিতে বহিরাগত নয়। এই কারণেই আমরা বিজেপিকে “বাংলা বিরোধি” এবং “জমিদার” বলি। তারা ভারতের বৈচিত্র্যকে সম্মান করে না”।

দিল্লি পুলিশকে ‘নিরক্ষর’ বলে কটাক্ষ করেছেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক (পশ্চিমবঙ্গ) মহম্মদ সেলিম। এক্স মাধ্যমে তিনি লেখেন, “‘নিরক্ষর’ দিল্লি পুলিশ আমাদের কি বলবে এই ‘বাংলাদেশি ভাষা’ কী? তাছাড়া দিল্লি পুলিশ কেন তাদের কর্মকর্তাদের আমাদের সংবিধানের ৮ম তফসিল সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যর্থ হয়েছে?”

অন্যদিকে, বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য এই ইস্যুকে "ভোটব্যাংক রাজনীতি" আখ্যা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে "ভুল তথ্য ছড়ানোর" অভিযোগ এনেছেন। পাশাপাশি তিনি দিল্লি পুলিশের কাজকে সমর্থন করে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।

অমিত মালব্য লেখেন, “অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার কারণে ভাষাকে বাংলাদেশী হিসাবে উল্লেখ করার ক্ষেত্রে দিল্লি পুলিশ একেবারেই সঠিক। আর ‘বাঙালি’ নামে কোনও ভাষা নেই। ‘বাঙালি’ মানে একটি জাতিকে বোঝায়”।

বঙ্গ বিজেপিও দিল্লি পুলিশের কাজে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, একদম ঠিক ভাষাই ব‍্যবহার করেছে দিল্লি পুলিশ। আপনি বাংলাদেশের একটা বই এনে পড়ুন। আর পশ্চিমবঙ্গের একটা বই এনে পড়ুন। আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, কোনটা সুবোধ সরকার লিখেছেন, আর কোনটা বাংলাদেশের সফিকুল ইসলাম লিখেছেন। তাই বাংলা ভাষায় কথা বললেই সে ভারতীয় হয়ে যাবে এটার কোনও প্রমাণ নেই।

দিল্লি পুলিশের সমালোচনা সিপিআইএম তৃণমূলের
Shibu Soren: প্রয়াত ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন
দিল্লি পুলিশের সমালোচনা সিপিআইএম তৃণমূলের
দেশজুড়ে আশা শ্রমিকদের ভাতা বৃদ্ধি কেন্দ্রের! বাড়ানো হয়েছে অবসরকালীন টাকাও

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in