
বৃহস্পতিবার মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় সাত অভিযুক্তকেই বেকসুর ঘোষণা করেছে এনআইএ-র বিশেষ আদালত। এই রায়ে খুশি নন বিস্ফোরণে স্বজন হারানো পরিবার। মাঝবয়সি হুসেন শাহের প্রশ্ন, "আমি যদি ইংরেজি জানতাম, তবে চিঠি লিখে জিজ্ঞেস করতাম, কেমন করে এতজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী প্রজ্ঞা ঠাকুরকে আপনি সাংসদ বানালেন? এতো বড় সম্মান!" বিস্ফোরণে নিজের বাবাকে হারিয়েছিলেন তিনি। মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ছিলেন হুসেনের বাবা হারুন শাহ।
মালেগাঁওয়ের স্কুলের সামনে স্যান্ডউইচ বিক্রি করেন হুসেন। সঙ্গে ছেলে আমিনও দোকান চালাতে বাবাকে সাহায্য করে। আমিন বলেন, "ঠাকুরদার গোটা শরীরটা পুড়ে গিয়েছিল, শুধু দাড়ির নিচে একটু অংশ বাদে। তাঁর যন্ত্রণায় আমিও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আশা করেছিলাম, অপরাধীরা শাস্তি পাবে। এই রায় সেই আশা নষ্ট করে দিল"।
ন্যায়বিচারের আশা করেছিলেন ৭৫ বছর বয়সি নিসার বিলাল। বিস্ফোরণে ১৯ বছরের তরতাজা ছেলে আজহারকে হারিয়েছিলেন তিনি। আজহার, হাফেজ হওয়ার জন্য কোরান মুখস্থ করতেন এবং পাশাপাশি ফ্রিজ মেকানিক হিসাবে কাজ শিখছিলেন। সেদিন মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটু অন্য রাস্তায় গিয়েছিলেন। সেখানেই বোমার স্প্রিন্টারে মৃত্যু ঘটে তাঁর। সুবিচারের আশায় একাধিকবার আদালতে আবেদন করেছেন নিসার। তিনিই প্রথম দিকের কয়েকজন পরিবারের একজন, যিনি মামলা চলাকালীন নিয়মিত মুম্বাই যাতায়াত করেছেন।
কানে ভালো শুনতে পাননা নিসার। মামলার রায় শুনে হতাশ তিনি। বললেন, "আমার উদ্দেশ্য ছিল এই মামলায় হস্তক্ষেপ করে শহরবাসীকে বোঝানো যে আশা এখনও বেঁচে রয়েছে, আজ নয় তো কাল, একদিন ন্যায়বিচার হবেই। আজকের রায় সেই বিশ্বাসটা গুঁড়িয়ে দিল"। তবে লড়াই ছাড়তে নারাজ তিনি। বললেন, "আমরা ন্যায়বিচার পাইনি, তাই উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হব। যে ধর্মেরই হোক, যে কোনো বিস্ফোরণের ভিকটিমদের ন্যায়বিচার পাওয়া উচিত"।
নিসারের মতো ন্যায়বিচারের আশায় লড়ে গিয়েছেন ৬৭ বছরের লিয়াকত শেখ। তাঁর ১০ বছরের মেয়ে ফারহিন শেখ ছিল, বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সি। সেদিন খাবার কিনতে বেরিয়েছিল সে, কিন্তু আর ফেরেনি। একসময়ের পেশাদার গাড়িচালক লিয়াকত বলেন, "এই রায় আমাদের মন ভেঙে দিয়েছে। আমি জীবনের অন্তিম প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। এরকম রায় শুনলে মনে হয়, হয়তো আর শান্তি পাবো না"। সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা বলেছেন তিনিও। লিয়াকত শেখের কথায়, "আদালতের রায় ভুল। আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব ন্যায়বিচারের জন্য"।
তবে অনেক পরিবার বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ব্যস্ত বাঁচার লড়াইয়ে। যেমন ৩৮ বছর বয়সি রেহান শেখ, যাঁর বাবা শেখ রফিক, বিস্ফোরণে মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পর অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর ওপর। এখন রেহান মালেগাঁও-মুম্বাই রুটে বাস কন্ডাক্টরের কাজ করেন। অন্যদিকে, একইভাবে বাকি পরিবারের ভার মাথার উপর নিয়ে মামলার তারিখই মনে রাখেনি আর এক নিহত ইরফানের কাকা উসমান।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন