
"এই মামলা আমার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে!" মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় 'বেকসুর খালাস' ঘোষণার পর আদালতে দাঁড়িয়ে একথা বললেন ভারতীয় জনতা পার্টির নেত্রী এবং প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর। বৃহস্পতিবার তথ্যপ্রমাণের অভাবে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (NIA) বিশেষ আদালতের বিচারক এ কে লাহোটি এই মামলায় অভিযুক্ত ৭ জনকেই 'বেকসুর' ঘোষণা করেন।
আদালতের রায়ের পর প্রজ্ঞা বলেন, "আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি যে কাউকে যদি তদন্তের জন্য ডাকা হয়, তাহলে তার পেছনে কিছু তো ভিত্তি থাকা উচিত। আমায় তদন্তের জন্য ডেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার পর অত্যাচার করা হয়। এর ফলে আমার পুরো জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।"
তিনি বলেন, "আমি একজন সন্ন্যাসীনির জীবনযাপন করছিলাম, কিন্তু আমাকে এইরকম ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াতে রাজি ছিল না। আমি এক জন সন্ন্যাসী বলেই এখনও পর্যন্ত বেঁচে আছি। ওরা চক্রান্ত করে গেরুয়ার অবমাননা করেছিল। আজ গেরুয়ার জয় হল, হিন্দুত্বের জয় হল। যারা দোষী, ঈশ্বর তাদের শাস্তি দেবেন"।
২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার মালেগাঁও শহরে এক বিস্ফোরণে ছয়জনের মৃত্যু হয়। ১০০-এরও বেশি আহত হয়েছিল। জানা যায় শহরের মসজিদ লাগোয়া কবরস্থানে একটি মোটরসাইকেলে দু’টি বোমা রাখা ছিল। তাতেই হয়েছিল বিস্ফোরণটি। ঘটনার তদন্তে নামে মহারাষ্ট্র সন্ত্রাসদমন শাখা (এটিএস)। তদন্তে উঠে আসে এই ঘটনার নেপথ্যে ছিল একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।
এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে উঠে এসেছিল ভোপালের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞার নাম, যদিও তখন তিনি সাংসদ হননি। যে মোটরসাইকেলে বোমা রাখা ছিল, সেটি প্রজ্ঞার নামে নথিভুক্ত ছিল বলে তদন্তে জানা যায়। এরপরেই বিস্ফোরণকাণ্ডে গ্রেফতার হন প্রজ্ঞা এবং প্রাক্তন সেনা আধিকারিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদশ্রীকান্ত পুরোহিত। পরে দু’জনেই জামিন পান।
এই মামলা ২০১১ সালে যায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র কাছে। এরপরে একাধিক চার্জশিট এবং অতিরিক্ত চার্জশিট জম পড়ে। ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয় মামলার বিচারপ্রক্রিয়া। সাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। ৩২৩ জন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে বিশেষ আদালতে কয়েকশো পাতার তথ্যপ্রমাণ পেশ করে এনআইএ। ১৯ এপ্রিল রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিচারক। অবশেষে ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার এই মামলার রায়দান করেন বিচারক এ কে লাহোটি।
এদিন রায়দানের সময় বিচারক একে লাহোটি বলেন, প্রসিকিউশন সফলভাবে প্রমাণ করেছে যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। মোটরসাইকেলে বোমা লাগানো ছিল কিনা তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এনআইএ।
আদালত আরও জানায়, যদিও বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য আরডিএক্স ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল, কিন্তু লেফটেন্যান্ট কর্নেল পুরোহিতের বাসভবনে আরডিএক্স মজুত ছিল এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনিই যে বোমা তৈরি করেছিলেন এমন কোনও প্রমাণও নেই।
আদালতের এ-ও পর্যবেক্ষণ, মোটরসাইকেলের মালিক প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর হলেও তা ব্যবহার করতেন রামচন্দ্র কালসাংরা। প্রজ্ঞা বিস্ফোরণের ঘটনার দু’বছর আগেই সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার বিশেষ আদালত জানায়, এই মামলায় ইউএপিএ প্রযুক্ত হয় না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন