
কেন্দ্রীয় সরকারের অযোধ্যা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে Auditor General of India (CAG) বা ক্যাগ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিয়ম ভেঙে অতিরিক্তি ১৯.৭৩ কোটি টাকারও বেশি অর্থ এই প্রকল্প বাস্তাবায়নের জন্য নিয়োগ করা ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে সিএজির রিপোর্টে।
কেন্দ্রের স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের অধীনে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাকে ঢেলে সাজানোর জন্য ‘অযোধ্যা উন্নয়ন প্রকল্প’ চালু করা হয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছিল, পর্যটনের উন্নয়নের লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এই স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের অধীনে কাজ হচ্ছে। ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পে খরচের খতিয়ান পরীক্ষা করে এই আর্থিক নয়ছয়ের কথা জানতে পেরেছে সিএজি। সংসদের সদ্য সমাপ্ত বাদল অধিবেশন চলাকালীন গত বুধবার লোকসভায় এই সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করেছে সিএজি।
রিপোর্টে যে যে দুর্নীতির উল্লেখ করা হয়েছে –
১) বিভিন্ন ধাপে আর্থিক অনিয়ম করা হয়েছে। অযোধ্যা উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ রাজকীয় নির্মাণ নিগম। ওই সংস্থা এক ঠিকাদারকে ৬২ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা কাজের বরাত দিয়েছে। শর্ত ছিল, বরাত পুনর্নবীকরণের জন্য ওই অঙ্কের ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩ কোটি ১১ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে ঠিকাদারকে, যা কাজের গ্যারান্টি হিসেবে জমা থাকবে। কিন্তু ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে যখন বরাত পুনর্নবীকরণ হয়, তখন ঠিকাদার মাত্র ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা জমা দেন। কম টাকা জমা দেওয়ার কোনও কারণও উল্লেখ করেননি তিনি।
২) এছাড়াও অযোধ্যার গুপ্তার ঘাটের উন্নয়নের কাজকে ১৪টি সমান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তর বিভিন্ন বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থাকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছে, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বরাদ্দ করেছে। এর জন্য অতিরিক্ত ১৯.১৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে সরকারি তহবিল থেকে।
৩) বরাত দেওয়ার পর তিন ঠিকাদারের জিএসটি নিবন্ধন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাতিল করে দেয় রাজ্য সরকার। অর্থাৎ তাঁরা আর নিবন্ধিত ঠিকাদার নয় এবং জিএসটি বাবদ অর্থ সংগ্রহের অধিকার নেই তাঁদের। তবুও বেআইনিভাবে এক ঠিকাদারকে তাঁর জিএসটি বাবদ ১৯ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার।
৪) কাজ সম্পাদিত হওয়ার আগেই বিল দেখিয়ে পুরো টাকা নেওয়া হয়েছে, এরকম একাধিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। গুপ্তার ঘাটে পাথরের স্ল্যাব বসিয়ে, সেগুলিকে এমএস ক্ল্যাম্প দিয়ে জুড়ে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কাজ হওয়ার আগেই জিএসটি বাবদ ৫১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা (১২ শতাংশ জিএসটি ছাড়া) ঠিকাদারদের দেওয়া হয়ে গেছে। তবে এই রিপোর্ট প্রকাশ করার পর উত্তরপ্রদেশ সরকার এই টাকা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সেচ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে।
৫) এছাড়াও সিএজি জানিয়েছে, অযোধ্যা উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়নে রাজ্য সরকার কাজের মূল্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করেনি। যার জেরে জিএসটি এবং লেবার খাতে অতিরিক্ত ৬ কোটি ৭ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে সরকারের। এছাড়াও রাজ্য সরকারের নির্দেশ ছিল, বরাদ্দ থেকে অর্থ বাঁচাতে কাজের খরচ ৫ শতাংশ কমাতে হবে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ রাজকীয় নির্মাণ নিগম সেই দায়িত্ব পালন না করায়, ৩ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা বেশি বেরিয়ে গেছে সরকারি তহবিল থেকে।
প্রকল্পে নজরদারির অভাবের অভিযোগ তুলে যোগী সরকারের সমালোচনাও করেছে সিএজি। ভারত দর্শন প্রকল্পের নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, এই প্রকল্পের কাজ যে রাজ্যে হবে সেখানেই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার কাজের অগ্রগতির নিয়মিত মূল্যায়ন করার জন্য একটি নজরদারি কমিটি তৈরি করবে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার সেই কমিটি তৈরি করেছে ২০১৯ সালের আগস্টে, প্রকল্প বরাদ্দ হওয়ার দু'বছর পর। তারপরও মাসে মাসে সেই কমিটি কোনও রিপোর্ট পাঠায়নি কেন্দ্রের পর্যটন মন্ত্রকের কাছে। কমিটি মন্ত্রকের কাছে প্রথম রিপোর্ট পাঠিয়েছে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। অর্থ বরাদ্দে এর কোনও প্রভাব পড়েনি যদিও।
উল্লেখ্য, আরও পাঁচ রাজ্যে স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের অধীনে উন্নয়নের কাজ চলছে। এগুলি হলো - গোয়ার সিঙ্কেরিম-আগুয়াদা জেল; হিমাচল প্রদেশের হিমালয়ান সার্কিট; তেলেঙ্গানার হেরিটেজ সার্কিট; সিকিমের রংপো-সিংটাম; মধ্যপ্রদেশের বৌদ্ধ সার্কিট।