
সম্প্রতি উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনধড় সুপ্রিম কোর্টের এক রায়কে কেন্দ্র করে শীর্ষ আদালতকে কাঠগড়ায় তুলে কিছু বক্তব্য রাখেন। তাঁর সেই মন্তব্যের পরেই দেশের বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং আইনজীবীদের বড়ো অংশ ওই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। এরপরেই গতকাল বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং দীনেশ শর্মা একই সুরে সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করেন। যদিও বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে দ্রুত বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে নিজেদের দূরত্ব বাড়ালো বিজেপি।
এক বিবৃতিতে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা জানিয়েছেন, দলীয় সাংসদদের ওই বক্তব্য একান্তই তাঁদের ব্যক্তিগত এবং এই ধরণের কোনও বক্তব্যের সঙ্গে বিজেপি সহমত নয়। তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানানো দেশের শাসকদলের অবশ্য কর্তব্য।
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এক পোষ্টে জে পি নাড্ডা জানিয়েছেন, “দেশের বিচারব্যবস্থা এবং প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং দীনেশ শর্মা যে মন্তব্য করেছেন তাতে বিজেপির কিছু করার নেই। এই মন্তব্য একান্তভাবেই তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত। বিজেপি এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নয় এবং এই ধরণের মন্তব্য বিজেপি কোনোভাবেই সমর্থন করে না। বিজেপি এই ধরণের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করছে।”
বিজেপি সভাপতি আরও জানিয়েছেন, তিনি দলের ওই দুই সাংসদ সহ অন্যান্যদেরও এই ধরণের মন্তব্য না করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন।
দলীয় দুই সাংসদের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে জে পি নাড্ডা জানান, বিচারব্যবস্থা দেশের সংবিধান রক্ষার ক্ষেত্রে মূল স্তম্ভ। বিজেপি সবসময় বিচারব্যবস্থাকে সম্মান করে এবং তাদের মতামত, পরামর্শ ও নির্দেশকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মান্যতা দেয়। কারণ দেশের সমস্ত আদালত দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কী বলেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে?
গতকাল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বলেন, শীর্ষ আদালত নিজেই যদি আইন তৈরি করতে চায় তাহলে দেশের লোকসভা এবং বিধানসভা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নারও কড়া সমালোচনা করেন। নিশিকান্ত দুবের মতে, সুপ্রিম কোর্ট কখনও সংসদ অথবা রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দিতে পারে না।
জগদীপ ধনখড়ের মন্তব্যের পর কী বলেছিলেন কপিল সিব্বাল?
উপরাষ্ট্রপতির এই মন্তব্যের পর প্রশ্ন ওঠে তাঁর এক্তিয়ার নিয়ে। জগদীপ ধনখড়ের ভূমিকাকে ‘সংবিধান বিরোধী’ বলেছেন প্রাক্তন আইনমন্ত্রী ও রাজ্যসভার নির্দল সদস্য কপিল সিব্বল। উপরাষ্ট্রপতির মন্তব্যের বিরোধিতা করে প্রবীণ আইনজীবী বলেন, ‘‘সরকারি প্রশাসন তার কাজ ঠিক মতো না করলে বিচারবিভাগকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। সেটা তার অধিকার। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য জরুরি। রাষ্ট্রপতি পদ এক আলঙ্কারিক পদ। তিনি মন্ত্রিসভার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন। তাঁর ব্যক্তিগত কোনও ক্ষমতা নেই। আর রাজ্যসভার কোনও চেয়ারম্যানকেও এমন রাজনৈতিক মন্তব্য করতে দেখিনি। আমি অবাক, দুঃখিতও”।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন