আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর জন সূরজ পার্টি কি আদৌ বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে? সাড়া জাগিয়ে শুরু করলেও এই মুহূর্তে পিকে-র জন সূরজ বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন এবারের ভোটে জন সূরজের পক্ষে খুব ভালো ফলাফল করা সম্ভব হবে না।
জন সূরজ পার্টি
২০২৪-এর ২ অক্টোবর তৈরি হওয়া জন সূরজের এত বড়ো নির্বাচন লড়ার অভিজ্ঞতা নেই। প্রশান্ত কিশোর ভোট কুশলী হিসেবে একাধিক বড়ো রাজ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভোট পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করলেও জন সূরজ এই প্রথম বিহারের মত এক বড়ো রাজ্যে নির্বাচনী ময়দানে। জন সূরজের নির্বাচনে লড়ার অতীত অভিজ্ঞতা বলতে গত বছর বিহারের চার আসনের উপনির্বাচনে লড়াই। আর সম্বল বলতে জনমত সমীক্ষায় মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে নীতিশ কুমারকে অনেক পেছনে ফেলে তাঁর দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা।
জন সূরজ কার বি টিম?
ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই বিহারের ক্ষমতাসীন বিজেপি-জেডিইউ এবং বিরোধী কংগ্রেস-আরজেডি – দুই পক্ষই জন সূরজকে আক্রমণ করছে ছাড়ছে না। একদিকে বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং যেমন প্রশান্ত কিশোরের দলকে বিরোধীদের বি টিম বলেছেন তেমনই আরজেডি শিবির থেকেও তাঁকে এনডিএ-র বি টিম বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ভোটারদের মনেও জন সূরজ আসলে সত্যিই কোনও পক্ষের বি টিম কিনা সেই প্রশ্ন ঢুকে গেছে। সেক্ষেত্রে কোনও বি টিমকে ভোট দিয়ে অন্য পক্ষের সুবিধা তাঁরা করে দেবেন কিনা সে বিষয়েও তাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে।
এক্ষেত্রে আরজেডি-র থেকেও কড়া আক্রমণে গেছে বিজেপি ও জেডিইউ। গিরিরাজ সিং যেমন বলেছেন, প্রশান্ত কিশোর বুঝতে পেরেছেন যে তিনি নির্বাচনে জিততে পারবেন না। তাই শেষ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর দল ‘ভোট কাটুয়া’ ছাড়া কিছুই নয়। আর আরজেডি-র বক্তব্য নীতিশ কুমারের বি টিম হিসেবে ভোটের ময়দানে নেমেছেন প্রশান্ত কিশোর। এখন প্রশ্ন একটাই। শাসক ও বিরোধীর সাঁড়াশি আক্রমণের মাঝে পড়ে প্রশান্ত কিশোরের পক্ষে নিজেকে তৃতীয় প্রকৃত বিকল্প হিসেবে তুলে ধরা কতটা সম্ভব হবে?
দলের মধ্যেই প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ
বিহারের শাসক এবং বিরোধীদের ‘ভোট কাটুয়া’ ‘বি টিম’ আক্রমণের বিরুদ্ধে যেমন লড়তে হচ্ছে পিকে-র দলকে, তেমনই নিজের দলের মধ্যেও প্রার্থী বাছাই নিয়ে চরম ক্ষোভ আছে। দলের শুরু থেকে যারা জন সূরজের সঙ্গে ছিলেন, গ্রামে গঞ্জে জন সূরজের ভিত্তি গড়েছেন, প্রার্থী বাছাইয়ের সময় তাদেরই বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ফলে এঁদের অনেকেই ভোটের কাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন।
জন সূরজের সঙ্গে দীর্ঘ একবছর ধরে যুক্ত থাকা একাধিক দলীয় কর্মী নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের অভিযোগ, তাঁরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে দলের ভিত তৈরি করেছেন। এখন নির্বাচনে মনোনয়ন দেবার সময় তাদের কথা না ভেবে বাইরে থেকে প্রার্থী এনে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ফলে আমাদের এতদিনের পরিশ্রমের কোনও মূল্যই থাকেনি।
মনোনয়ন প্রসঙ্গে কী বলছেন পিকে?
নির্বাচনের মনোনয়ন প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রশান্ত কিশোর জানিয়েছেন, প্রায় বারোশো পঞ্চাশ জন মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিল। যার মধ্যে ৭৫০ জন প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে। এঁদের মধ্যে থেকে ২৪৩ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে কিছু মনোমালিন্য থাকতেই পারে।
এর মধ্যেই গোপালগঞ্জ, ব্রহ্মপুর এবং দানাপুর কেন্দ্রে জন সূরজ প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কোনও কোনও মহলে গুঞ্জন এই তিন কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীকে সুবিধে করে দিতেই জন সূরজ মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছে। যদিও প্রশান্ত কিশোর নিজে এই বিষয়ে সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুসারে, নির্বাচনে পরাজিত হবার ভয়ে তাঁর দলের প্রার্থীদের লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরানো হয়েছে। গোপালগঞ্জ কেন্দ্রে গত বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র ১,৭৯৪ ভোটে জয়লাভ করে বিজেপি। ব্রহ্মপুর ও দানাপুর কেন্দ্রে পরাজিত হয় বড়ো ব্যবধানে।
জন সূরজ থেকে বিজেপিতে যোগ
এছাড়াও ভোটের মুখে জন সূরজের বেশ কয়েকজন শীর্ষ আধিকারিক বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় পিকে-র কাছে জোর ধাক্কা। বিশেষ করে রাজ্য মুখপাত্র অমিত পাসোয়ান, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কর্মবীর পাসোয়ান এবং প্রাক্তন কাউন্সিলর অনিতা কুমারীর বিজেপিতে যোগদান জন সূরজের কাছে বড়ো ধাক্কা।
নীতিশ কুমারের জেডিইউ সম্পর্কে কী বলেছেন পিকে?
বিহারের এবারের বিধানসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রশান্ত কিশোর জানিয়েছেন, নীতিশ কুমারের জেডিইউ ২৫টির বেশি আসন পাবে না। তিনি আরও বলেছেন, নীতীশ কুমার বিহারের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন না, এবং জেডিইউ ২৫টির বেশি আসন পাবে না।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন