Bihar Polls 25: প্রশান্ত কিশোর-ই কি বিহার ভোটের প্রধান চমক? হতে চলেছেন ২০২০-র চিরাগ পাসোয়ান?

People's Reporter: ভোট কুশলী হয়ে কোনও রাজনৈতিক দলকে পরামর্শ দেওয়া আর নিজে রাজনৈতিক দল করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এক নয়। নতুন ভূমিকায় পিকে সফল নাকি ব্যর্থ জানতে আগ্রহী সকলেই। যা জানা যাবে ১৪ নভেম্বর।
প্রশান্ত কিশোর এবং চিরাগ পাসোয়ান
প্রশান্ত কিশোর এবং চিরাগ পাসোয়ানফাইল ছবি - সংগৃহীত
Published on

এতদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ভোটের পরামর্শ দেওয়া প্রশান্ত কিশোর এবার নিজেই ভোট যুদ্ধে। কিছুদিন আগেই প্রশান্ত কিশোর তৈরি করেছেন নতুন রাজনৈতিক দল জন সূরজ পার্টি। যে দল এবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ২৪৩ কেন্দ্রেই প্রার্থী দিয়েছে। এর আগে বিজেপি, কংগ্রেস, আপ, অয়াইএসআরসিপি, ডিএমকে, তৃণমূলকে ভোটের পরামর্শ দেওয়া ভোট কুশলী বা পোল স্ট্র্যাটেজিস্ট পিকে-র দল বিহার বিধানসভা নির্বাচনে কী ফল করে তা দেখতে উৎসুক সকলেই। তবে ভোট কুশলী হয়ে কোনও রাজনৈতিক দলকে পরামর্শ দেওয়া আর নিজে রাজনৈতিক দল তৈরি করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এক নয়। তাই নতুন ভূমিকায় পিকে সফল হবেন নাকি ব্যর্থ তা জানতে আগ্রহী সকলেই। যা জানা যাবে আগামী ১৪ নভেম্বর।

বিহার বিধানসভা নির্বাচনে মোট ২৪৩ আসনের সবকটিতেই প্রার্থী দিয়েছে জন সূরজ। যদিও ২১ অক্টোবর প্রশান্ত কিশোর জানিয়েছেন ৩ আসনে বিজেপি ভয় দেখিয়ে তাঁর দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে। এদিনই এক সাংবাদিক সম্মেলনে কিশোর জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) হেরে যাবার ভয়ে ভীত। তাই হুমকি দিয়ে বিরোধীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে। দেশে এই ধরণের কোনও নজির ছিলনা।” যে তিন কেন্দ্র থেকে জনসূরজ পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে সেই তিন কেন্দ্র হল দানাপুর, ব্রহ্মপুর এবং গোপালগঞ্জ।

যদিও মূল বিষয় এটা নয়। বিহারের আসন্ন নির্বাচনে জন সূরজ ভোটারদের মনে কতটা প্রভাব ফেলেছে তার দিকেই এখন নজর রাজনৈতিক মহলের। তাঁর দল কত ভোট পাবে, সেই ভোটের হারে ক্ষমতাসীন এনডিএ অথবা বিরোধী মহাজোট – কার কতটা লাভ বা ক্ষতি হবে নির্বাচনী ফলাফল না এলে তা বোঝা যাবে না। যদিও পিকে ফ্যাক্টর এবারের বিহারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে এবং সব রাজনৈতিক দলেরই নজর আছে পিকের দলের দিকে। এটুকু বলা যেতে পারে এবারের বিহারের নির্বাচন হাড্ডাহাড্ডি হবার সম্ভাবনা বেশি।

এই প্রসঙ্গে ২০২০-র বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের দিকে চোখ রাখা যেতে পারে। সেবার যদিও পিকে বা তাঁর দল ছিল না কিন্তু এনডিএ শিবিরকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি (রামবিলাস)। মাত্র ১৩৭ আসনে প্রার্থী দিয়ে ১ আসনে জয়ী হলেও নীতিশ কুমারের জেডিইউ-র ভোট কেটে তাদের ৪৩ আসনেই আটকে দিয়েছিলেন চিরাগ পাসোয়ান। চিরাগ পাসোয়ানের দল ভোট পেয়েছিল ৫.৬৬ শতাংশ। ভোটের হারের বৃদ্ধি ছিল ০.৭৭ শতাংশ। অন্যদিকে সেবার জেডিইউ-র ভোট কমেছিল ১.৪৪ শতাংশ। বিজেপির ভোট সেবার ৪.৯৬ শতাংশ কমলেও চিরাগ পাসোয়ানের দল সেভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি। মূল ক্ষতি হয়েছিল নীতিশ কুমারের জেডিইউ-র।

গত বিধানসভা নির্বাচনে মোট ৬৩ আসন এরকম ছিল যেখানে জয়ের ব্যবধানের থেকে এলজেপি-র প্রাপ্ত ভোট বেশি ছিল। বেশ কিছু কেন্দ্রে এলজেপি-র জন্য সরাসরি পরাজিত হতে হয়েছিল জেডিইউকে। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি কেন্দ্রের উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন আলাউলি। যে কেন্দ্রে জেডিইউ প্রার্থী পেয়েছিল ৪৪,৪১০ ভোট। আর এলজেপি পেয়েছিল ২৬,৩৮৬ ভোট। আরজেডি প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান ছিল ২,৭৭৩০।

বাজপাট্টি কেন্দ্রে জেডিইউ তথা এনডিএ প্রার্থী পেয়েছিল ৬৮,৭৭৯ ভোট। আরজেডি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৭১,৪৮৩ এবং এলজেপি প্রার্থী পেয়েছিল ৬,১৮৩। জয়ের ব্যবধান ছিল ২,৭০৪।

ভাগলপুর কেন্দ্রে জয়ের ব্যবধান ছিল ১,১১৩। যেখানে কংগ্রেস প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬৫,৫০২, বিজেপির ৬৪,৩৮৯ এবং এলজেপি-র ২০,৫২৩। এই ধরণের উদাহরণ আরও দেওয়া যেতে পারে।

কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনের এলজেপি আর এবারের বিধানসভা নির্বাচনের এলজেপি (রামবিলাস) এক নয়। শেষ লোকসভা নির্বাচনে ৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চিরাগ পাসোয়ানের দল জয়ী হয়েছে ৫ আসনেই। প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার ৬.৪৭%। অর্থাৎ এককভাবে লড়াই করে যে এলজেপি ৫.৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল এনডিএ শরিক হিসেবে লড়াই করে তারা পেয়েছে ৬.৪৭% ভোট। এবার বিধানসভা ভোটে চিরাগ পাসোয়ানের দল যেহেতু এনডিএ শরিক তাই তাদের প্রাপ্ত ভোট এনডিএ শিবিরেই যুক্ত হবে।

অতএব প্রশ্ন প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে। প্রশ্ন জন সূরজকে নিয়ে। তিনি এনডিএ অথবা মহাজোট – কার পথের কাঁটা হবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও ২০২৪-এর ১৩ নভেম্বর বিহারের ৪ বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফলাফলে যথেষ্টই সাড়া জাগিয়েছিল জন সূরজ। বেলাগঞ্জ, ইমামগঞ্জ, রামগড় এবং তারারি কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রথমবার লড়াই করে জন সূরজ পেয়েছিল যথাক্রমে ১০.৬৬%, ২২.৪৬%, ৬.৩০% এবং ৩.৪৮% ভোট। ফলাফলের বিচারে ৩ কেন্দ্রে তৃতীয় এবং ১ কেন্দ্রে চতুর্থ হলেও জন সূরজ যে জনমানসে প্রভাব ফেলেছে তা এই ফলাফল থেকেই স্পষ্ট।

এছাড়াও অক্টোবর মাসের প্রথমে সি ভোটার যে জনমত সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে তাতে বিহারের মানুষের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন প্রশান্ত কিশোর। তৃতীয় স্থানে নীতিশ কুমার এবং চতুর্থ স্থানে চিরাগ পাসোয়ান। প্রথম তেজস্বী যাদব। জনমত ভোটে প্রথম তিনজনের মধ্যে ব্যবধানও অনেকটাই। তেজস্বীকে যেখানে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চাইছে ৩৬.২০%, প্রশান্ত কিশোর সেখানে ২৩.২০ %-এর পছন্দ এবং অনেক পেছনে ১৫.৯০ % মানুষ চাইছেন নীতিশকে। অর্থাৎ জন সূরজের ভালোরকম প্রভাব কিন্তু বিহারের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে।

তাহলে প্রশ্ন একটাই। প্রশান্ত কিশোর কি এবার ২০২০-র চিরাগ পাসোয়ান হতে চলেছেন? যিনি এনডিএ এবং মহাজোট – দু’পক্ষেরই ভোট কেটে তৃতীয় প্রধান শক্তি হয়ে উঠবেন? নাকি প্রশান্ত কিশোর যা বলেছেন, হয় ১০ এর নীচে নয় ১৫০-এর ওপরে। মাঝামাঝি কিছু নেই-এর দিকেই ফলাফল টেনে নিয়ে যাবেন? কারণ বিহারে প্রবল প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া বইছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। মহাজোটের আসন সমঝোতার টানাপোড়েনে সাধারণ ভোটার কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েছেন তাতেও সন্দেহ নেই। তবে কি এবার পিকে-ই হতে চলেছেন কিং মেকার?

প্রশান্ত কিশোর এবং চিরাগ পাসোয়ান
ভোটের বিহারে মুসলিমদের 'নমক হারাম' আক্রমণ গিরিরাজ সিংয়ের! বিব্রত এনডিএ, ক্ষোভ বিরোধীদের

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in