
* বিহারে ছন্নছাড়া মহাজোট, শরিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে।
* আসন বন্টন নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষোভ আরজেডি, কংগ্রেস - দুই শিবিরেই।
* বিরোধীদের অনৈক্যে ভোটারদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে - মত রাজনৈতিক মহলের।
মাসখানেক আগেও বিহারে বিরোধীদের ভোটার অধিকার যাত্রা সাড়া ফেলেছিল জনমানসে। বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ চেহারায় শঙ্কিত হয়েছিল শাসক শিবিরও। যদিও বিহারে ভোট যত এগিয়ে আসছে বিরোধী মহাজোটের ছন্নছাড়া অবস্থা ততই প্রকট হয়ে উঠছে। আরজেডি, কংগ্রেস, সিপিআই-এর যুযুধান এই রূপের প্রভাব ভোটের ফলাফলেও পড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ আসনে মহাজোটের শরিকদের এই দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এর ফলে মহাজোট সম্পর্কে ভোটারদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।
বিহারে মহাজোটের শরিকদের মধ্যে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের যে ঘটনা সামনে এসেছে তা কুটুম্ব কেন্দ্র নিয়ে। এই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ রাম। যিনি এই কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়কও। যদিও এই কেন্দ্র থেকে নিজেদের দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছে আরজেডি। দলের পক্ষে ওই কেন্দ্র থেকে সুরেশ রামের নাম ঘোষণা করেছে তেজস্বী যাদবের দল। আরজেডি-র এই ঘোষণায় যথেষ্টই ক্ষুব্ধ কংগ্রেস।
রাজনৈতিক মহলের মতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তেজস্বী যাদবের নাম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা না করায় ক্ষুব্ধ আরজেডি প্রধান। তিনি মনে করেছেন এই বিষয়ে রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ রাম-এর কারণেই তাঁর নাম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রস্তাব করেনি কংগ্রেস।
অন্যদিকে আরজেডি-র এই ঘোষণার পর শুক্রবার রাতে এক এক্স বার্তায় রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ রাম জানিয়েছেন, দলিতকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, মাথা নিচু করানো যাবে না, এবার বিপ্লব হবে। জয় বাপু, জয় ভীম, জয় সংবিধান, জয় কংগ্রেস।
মহাজোটের শরিকদের মধ্যেকার দ্বন্দ ছাড়াও প্রতিটি দলেও মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে কংগ্রেস সাংসদ তারিক আনোয়ার রাজ্য কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কংগ্রেস যেভাবে টিকিট বন্টন করেছে তাতে জয়ের সম্ভাবনা অনেক কমে গেছে। ২০২০ সালের বিধানসভা যে প্রার্থী মাত্র ১১৩ ভোটে জেডিইউ প্রার্থীর কাছে হেরেছিল এবার তাঁকে মনোনয়ন না দিয়ে অন্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মনোনয়ন না পেয়ে বসে গেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র এবং দলের রিসার্চ উইং-এর প্রধান আনন্দ মাধব। তিনি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকাঅর্জুন খাড়গেকে এক চিঠিতে জানিয়েছেন, যেভাবে কংগ্রেসে প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাতে কংগ্রেস ১০ আসনে জয়ী হবে কিনা সন্দেহ। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিহারে সবাই জানে এখানে কংগ্রেসের প্রার্থীপদ বিক্রি করা হয়েছে।
মনোনয়ন নিয়ে একইরকম অসন্তোষ আছে আরজেডি-র মধ্যেও। সম্প্রতি মনোনয়ন না পেয়ে লালুপ্রসাদ যাদবের বাড়ির সামনে নিজের জামা ছিঁড়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মধুবনী বিধানসভার প্রাক্তন আরজেডি প্রার্থী মদন শাহ। তিনি কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছেন, সঞ্জয় যাদব মনোনয়নের জন্য তাঁর কাছ থেকে বড়ো অঙ্কের অর্থ দাবি করেছিলেন। তিনি সেই টাকা দিতে পারেননি বলে তাঁকে প্রার্থীপদ দেওয়া হয়নি। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে মদন প্রসাদ বিজেপি প্রার্থীর কাছে ৫,৮৭৮ ভোটে পরাজিত হন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন