
দেশের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই-কে (CJI) জুতো ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করলেন এক আইনজীবী। আদালত কক্ষের ভেতরেই চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে সোমবার। যদিও রাকেশ কিশোর নামক ওই আইনজীবীর জুতো ছোঁড়ার ঘটনায় বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই। ঘটনার পর তিনি জানিয়েছেন ‘এই ধরণের ঘটনায় আমার কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না।” এই ঘটনার পরেও তিনি নির্ধারিত সূচী অনুযায়ীই তাঁর কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার পর প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই জানান, “এই ধরণের ঘটনায় বিভ্রান্ত হবেন না। এই ধরণের কোনও ঘটনা আমাদের বিভ্রান্ত করতে পারে না। এই ধরণের কোনও ঘটনায় আমি বিচলিত বোধ করিনা।” এদিনের ঘটনার পরেই ওই আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্র অনুসারে ৭১ বছর বয়সী ওই আইনজীবী দিল্লির ময়ূর বিহার অঞ্চলের বাসিন্দা এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন (SCBA)-এর সদস্য। ঘটনার তদন্ত চলছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
সূত্র অনুসারে, শুনানি চলাকালীন অভিযুক্ত আইনজীবী রাকেশ কিশোর প্রধান বিচারপতির চেয়ারের দিকে এগিয়ে যান এবং নিজের জুতো খুলে প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে ছোঁড়ার চেষ্টা করেন। যদিও এই ঘটনা ঘটানোর আগেই নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁকে ধরে ফেলেন এবং দ্রুততার সঙ্গে তাঁকে আদালত কক্ষের বাইরে নিয়ে যান।
সোমবার আইনজীবী রাকেশ কিশোর প্রধান বিচারপতিকে জুতো ছুঁড়ে মারার ব্যর্থ চেষ্টা করার পর তাঁকে ধরে নিরাপত্তা রক্ষীরা আদালত কক্ষের বাইরে নিয়ে যান। এই সময় ওই আইনজীবীকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, “ সনাতনের কোনও অপমান সহ্য করব না (সনাতন কা অপমান নেহি সহেঙ্গে)।” এক বিষ্ণু মূর্তির পুনঃস্থাপন প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ছিলেন ওই আইনজীবী।
ঘটনার সূত্রপাত যদিও কয়েকদিন আগের। সম্প্রতি এক মামলায় প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ছিলেন ওই আইনজীবী। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে চিহ্নিত মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মন্দিরে চত্বরে বিষ্ণুর এক সাত ফুট মূর্তি পুনঃনির্মাণ ও প্রতিস্থাপন করতে চেয়ে আবেদন করেন রাকেশ দালাল নামের এক ব্যক্তি। যে আবেদন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই।
বার অ্যান্ড বেঞ্চের প্রতিবেদন অনুসারে, রাকেশ দালালের করা এক আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছিলেন, "যান, দেবতাকে এখনই কিছু করতে বলুন। আপনি বলছেন আপনি ভগবান বিষ্ণুর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তাই এখনই গিয়ে প্রার্থনা করুন। এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং এর জন্য ASI-এর অনুমতি নেওয়া দরকার।"
এই ঘটনার পরেই সোশ্যাল মিডিয়াতে বহু ব্যক্তি প্রধান বিচারপতির মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর কয়েকদিন পরে প্রধান বিচারপতি স্পষ্টভাবে জানান, তিনি কাউকে অসম্মান করেননি। তিনি সমস্ত ধর্মকেই সম্মান করেন। এসব সোশ্যাল মিডিয়াতে হয়েই থাকে বলেও তিনি জানান।
এই ঘটনায় প্রধান বিচারপতির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়শই কোনও ঘটনার প্রতিক্রিয়া ক্রিয়ার থেকে বেশি হয়ে যায়। তিনি নিউটনের সূত্রের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, "আমরা এটা দেখেছি... নিউটনের সূত্রে বলা হয়েছে যে প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান প্রতিক্রিয়া হয়, কিন্তু এখন প্রতিটি ক্রিয়ারই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, মাই লর্ড।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন