'সাংবিধানিক রক্ষাকবচ নষ্ট করার চেষ্টা!' বন্দি মন্ত্রীদের সরানোর বিল নিয়ে সরব মমতা-অভিষেক-প্রিয়াঙ্কা

People's Reporter: প্রধানমন্ত্রী, কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রী যদি টানা ৩০ দিন জেলে থাকেন, তা হলে তাঁকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে। বুধবার লোকসভায় বিল পেশ করেন অমিত শাহ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীছবি - সংগৃহীত
Published on

বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) বিতর্কের আবহে বুধবার সংসদে একটি নয়া বিল পেশ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিলে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রী যদি টানা ৩০ দিন জেলে থাকেন, তা হলে তাঁকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বিরোধী শিবিরের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য এটা একটা নতুন উপায়। এই বিলের বিরোধিতা করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিল এনে হিটলারি কায়দায় গণতন্ত্রের উপর আঘাত হানতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।

বুধবার লোকসভায় এই বিল পেশ করেন অমিত শাহ। যেখানে বলা হয়েছে - যদি প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যের মন্ত্রী গুরুতর অভিযোগে টানা ৩০ দিন ধরে হেফাজতে থাকেন এবং যদি তাঁর পাঁচ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হলে ৩১ দিনের দিন অভিযুক্তকে পদ থেকে সরে যেতে হবে। এর পরেই হট্টগোল শুরু হয়। কংগ্রেস, তৃণমূল সহ বিরোধীরা বিলটির কপি ছিঁড়ে ফেলে দেন। হট্টগোলের জেরে মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভা।

একযোগে বিরোধীরা এই বিল প্রসঙ্গে মুখ খোলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের এক্সে পোস্ট করে লেখেন, “সাধারণ মানুষের দেওয়া ভোটে সরকার তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াকেই তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। অনির্দিষ্ট ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে ইডি-সিবিআইয়ের হাতে, যাদের সুপ্রিম কোর্ট খাঁচাবন্দি তোতা বলেছিল। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকেই ধসিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতেই যাবতীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে”। যেকোনও মূল্যে এই বিল আটকানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মমতা লেখেন, “গণতন্ত্রকে বাঁচানোর সময় এসেছে। গণতন্ত্র, আদালতের ক্ষমতা কেড়ে নিলে মানুষ ক্ষমা করবে না”।

মমতার মতে, এটা দেশের গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামকে হত্যার চক্রান্ত। তিনি বলেন, “এটা কোনও সংস্কার নয়। বরং এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে বিচারব্যবস্থার আর কোনও স্বাধীনতাই থাকবে না। এটা বিচার ব্যবস্থাকে দমানোর চেষ্টা। সাংবিধানিক রক্ষাকবচ নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। এই বিলের উদ্দেশ্যই হল— এক ব্যক্তি, এক দল এবং এক সরকারের হাতেই যাবতীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া”।

কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বলেন, “সম্পূর্ণ মধ্যযুগীয় আচরণ…দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থার নামে আসলে মানুষের চোখে পট্টি বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। কাল যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর নামে কোনও অভিযোগ দায়ের করে, বিচার ছাড়াই তাঁকে ৩০ দিনের জন্য আটকে রাখতে পারেন। তাতেই আর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না তিনি? এই পদক্ষেপ অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক”।

তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্সে লিখেছেন, “পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর দখলের সাহস নেই। দেশের সার্বভৌমিকতা, সীমান্তসুরক্ষা, শত্রুর মোকাবিলার কথা উঠলে ফাঁপা বুক চাপড়ানি শুধু। সাংবিধানিক দায়িত্বপালনের পরিবর্তে শুধুমাত্র ক্ষমতাদখল, সম্পদ আহরণ, নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায় এই সরকার। এমন কর্তৃত্ববাদী আচরণের তীব্র নিন্দা করছি। মধ্যযুগীয় এই সংবিধান সংশোধনী বিলের তীব্র বিরোধিতা করছি। দেশের কৃষক, শ্রমিক, দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে ব্যর্থ ভারত সরকার, দেশের সার্বভৌমিকতা রক্ষায় ব্যর্থ”।

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে SIR করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখন ইডিকে সক্রিয় করেছে যাতে বিরোধীদের নিশানা করা যায়, গণতন্ত্রের শ্বাসরোধ করা যায়। বিজেপি-কে একটি ভোটও দেওয়ার অর্থ দেশের আত্মাকে বিক্রি করে দেওয়া। ওদের ভোট দেওয়ার অর্থ দেশের সংবিধান বিক্রি করে দেওয়া, ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ভারতকে উগ্র স্বৈরাচারীদের হাতে তুলে দেওয়া”।

উল্লেখ্য, আবগারি দুর্নীতি মামলায় দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেফতার হয়ে তিহাড় জেলে বন্দি ছিলেন। জেলে বসেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কারণ অভিযুক্ত মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীকে সরানোর কোনও ব্যবস্থা সংবিধানে ছিল না। নয়া বিলে রাজ্যের রাজ্যপালকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এবং প্রধানমন্ত্রীকে সরানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। যদিও কেন্দ্রের দাবি, অপরাধমুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতেই এই বিল। 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
CPIM: 'দমনমূলক', 'গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আক্রমণ' - কেন্দ্রের প্রস্তাবিত তিন বিলের বিরুদ্ধে সরব CPIM
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
৩০ দিন জেলে থাকলেই প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বরখাস্ত করা যাবে, নতুন বিল আনছে কেন্দ্র

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in