Assam: আসামের কারবি আংলং-এ সংঘর্ষ, মৃত ২, বন্ধ ইন্টারনেট

People's Reporter: সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিল অনুসারে সুরক্ষিত এবং স্বায়ত্তশাসিত কারবি আংলং-এর পাহাড়ি অঞ্চলে অবৈধ অ-উপজাতি বসতি স্থাপনের অভিযোগে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে কারবি যুবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
কারবি আংলং-এ হিংসা
কারবি আংলং-এ হিংসাছবি, ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট
Published on

আসামের কারবি আংলং জুড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়ায় বন্ধ করে দেওয়া হল ইন্টারনেট ও মোবাইল ডেটা পরিষেবা। কারবি আংলং এবং পশ্চিম কারবি আংলং জেলা জুড়ে হিংসার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুই জেলায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আসাম সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল থেকে দুই জেলায় ইন্টারনেট এবং মোবাইল ডাটা পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

গতকাল আসাম সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আধিকারিক বিশ্বজিৎ পেগু এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইন্টারনেট এবং মোবাইল ডাটা পরিষেবা বন্ধ রাখা হলেও ভয়েস কল এবং ল্যান্ডলাইনের ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু থাকবে। কারবি আংলং এবং পশ্চিম কারবি আংলং জেলায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পরেই আসাম সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।

ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে?

দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে। যখন বিক্ষোভকারীরা কারবি আংলং অটোনোমাস কাউন্সিলের (KAAC) সদস্য এবং বিজেপির মুখ্য আধিকারিক তুলিরাম রঙ্ঘাং-এর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। আরটুকেকাং-এর এই ঘটনার পরেই বিভিন্ন জায়গায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। খেরোনি এলাকায় বেশ কিছু দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

মূলত কারবি যুবকরাই এই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাদের মূল দাবি এই অঞ্চল থেকে হিন্দিভাষী ও অন্যান্য ভাষাভাষীদের খেরোনি এলাকা ছাড়তে হবে। কারবি যুবকদের মতে তাঁরা ‘অবৈধভাবে’ এই অঞ্চলে বসবাস করছেন।  যদিও ভিন্ন ভাষাভাষী এই মানুষজন কয়েক পুরুষ ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করছেন। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে জেনখায় ভিন্ন ভাষাভাষীদের উচ্ছেদের দাবিতে অনশন চালাচ্ছেন কারবি যুবকদের এক গোষ্ঠী। গতকাল কারবি যুবকদের হিংসার প্রতিরোধে অন্যন্য ভাষাভাষী মানুষেরাও রাস্তায় নামেন।

কেন এই বিক্ষোভ?

সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিল অনুসারে সুরক্ষিত এবং স্বায়ত্তশাসিত কারবি আংলং-এর পাহাড়ি অঞ্চলে অবৈধ অ-উপজাতি বসতি স্থাপনের অভিযোগে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে কারবি যুবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সম্প্রতি উপজাতি বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে এক উপজাতি যুবকের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। গতকাল খেরোনিতে বেশ কিছু দোকানে আগুন লাগানো হলে সেখানে আগুনে পুড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়।

আসামের ডিজিপি জানিয়েছেন, আদিবাসী যুবকরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালানোয় ৪৮ জন নিরপত্তাকর্মী ঘায়েল হয়েছে।

গতকালই অনশনরত কয়েকজন যুবককে পুলিশ স্বাস্থ্যের কারণে গুয়াহাটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। এই সময়েই গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশ একজন বিক্ষোভকারী নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপরেই বিক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুরে আসামের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ও আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী রনোজ পেগু তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) এক বিবৃতিতে জানান, “আমি খেরোনি ফেলংপিতে কার্বি সম্প্রদায়ের সদস্যদের সাথে দেখা করেছি, যেখানে তারা অন্যান্য দাবির পাশাপাশি খেরোনি পিজিআর/ভিজিআর-এর বেদখল উচ্ছেদের দাবিতে আমরণ অনশন করছিলেন। আমার অনুরোধে আন্দোলনকারীরা তাদের অনশন ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে সম্মত হন এবং কার্বি আংলং স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ ও আসাম সরকারকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় রাজি হন। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে এই আলোচনার সভাপতিত্ব করবেন।” যদিও এই ঘোষণার মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে।

কারবি আংলং এবং পশ্চিম কারবি আংলং-এর ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সম্পূর্ণ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং খেরোনি অঞ্চলে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে এই ঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “আজকের অস্থিরতার সময় দুই ব্যক্তির প্রাণহানি অত্যন্ত বেদনাদায়ক।”

কারবি আংলং-এর ঘটনা প্রসঙ্গে বুধবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গৌরব গগৈ বলেন, সকলের প্রতিবাদ করার গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক অধিকার আছে। কিন্তু কংগ্রেস দলের প্রতিনিধি হিসেবে, লোকতন্ত্রের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বলতে চাই হিংসার পথ নেওয়া ঠিক নয়। কারবি আংলং-এর ঘটনায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে শান্তি রক্ষা করার আবেদন জানাচ্ছি। পাশাপাশি সরকারকে ধৈর্য সহকারে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানাচ্ছি।    

আসাম সরকারের পক্ষ জানানো হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে ‘হিংসাত্মক’ বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হতে পারে এবং গুজব ছড়ানো হতে পারে। যাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আসাম সরকার কার্বি আংলং এবং পশ্চিম কার্বি আংলং জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ২৩.১২.২০২৫ তারিখে এই দুই জেলায় উদ্ভূত গুরুতর আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে এবং যেহেতু, কার্বি আংলং ও পশ্চিম কার্বি আংলং জেলায় জনশান্তি ও স্থিতিশীলতা ভঙ্গের গুরুতর আশঙ্কা রয়েছে, এবং যেহেতু আসাম সরকার আশঙ্কা করছে যে সামাজিক মাধ্যম ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে আরও উস্কানিমূলক বার্তা, গুজব ইত্যাদি ছড়ানো হতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।”

কারবি আংলং-এ হিংসা
Assam: বেসরকারি সংস্থাকে ৩০০০ বিঘা জমি বরাদ্দ! আসামের BJP সরকারের সিদ্ধান্তে বিস্মিত হাইকোর্ট
কারবি আংলং-এ হিংসা
Assam: প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ভিনধর্মে জমি বিক্রি নয়! 'ল্যান্ড জেহাদ' রুখতে পদক্ষেপ আসাম সরকারের

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in