
* এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের জেরে গ্রেপ্তার হন অশোকা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদ।
* তাঁর বিরুদ্ধে দুটি এফ আই আর দায়ের করা হয়।
* অধ্যাপকের গ্রেপ্তারির নিন্দা সব মহলে।
* আগামী কাল অথবা পরশু সুপ্রিম কোর্টে তাঁর আবেদনের শুনানি হবে।
‘অপারেশান সিঁদুর’ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করে গ্রেপ্তার হওয়া অশোকা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের (Ali Khan Mahmudabad) আবেদন গ্রহণ করলো সুপ্রিম কোর্ট। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারির নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে তিনি শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আগামীকাল মঙ্গলবার অথবা বুধবার তাঁর আবেদনের শুনানি হবে। রবিবার অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহ-র বেঞ্চ আইনজীবী কপিল সিব্বালের করা আবেদনের ভিত্তিতে জানিয়েছে এই আবেদনের শুনানি তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে এবং আগামীকাল মঙ্গলবার অথবা বুধবার এই আবেদনের শুনানি হবে। এদিনই অধ্যাপককে দু’দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল এদিন আদালতে জানান, অধ্যাপককে এক আদ্যোপান্ত দেশপ্রেমী পোষ্ট করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজই এই আবেদনের শুনানির ব্যবস্থা করুন। যার উত্তরে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই আগামীকাল অথবা পরশু এই আবেদনের শুনানির জন্য তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেন।
দুটি এফআইআর-এর ভিত্তিতে গত রবিবার গ্রেপ্তার করা হয় অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে। যার মধ্যে একটি এফআইআর দায়ের করেছিলেন হরিয়ানা মহিলা কমিশনের পক্ষে চেয়ারপার্সন রেণু ভাটিয়া এবং অন্য এফআইআর করেন স্থানীয় এক গ্রামের সরপঞ্চ ও বিজেপি যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক জোগেশ জাঠেদি।
হরিয়ানা মহিলা রাজ্য কমিশনের পক্ষ থেকেও ওই অধ্যাপককে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। যে নোটিশ প্রসঙ্গে অধ্যাপক জানিয়েছিলেন, তাঁর বক্তব্যের ‘ভুল ব্যাখ্যা’ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন বাক স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার মেনেই তিনি লিখেছেন।
অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে অশোকা বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশন। বিবৃতিতে অধ্যাপককে “ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক অভিযোগে” গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা অধ্যাপক মাহমুদাবাদকে যে পরিকল্পিত হয়রানির শিকার করা হয়েছে তার নিন্দা জানাই। নয়াদিল্লিতে তাঁর বাড়ি থেকে ভোরে গ্রেপ্তারের পর, তাকে সোনিপতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতে দেওয়া হয়নি এবং তার অবস্থান সম্পর্কে কোনও যোগাযোগ ছাড়াই তাঁকে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “অধ্যাপক মাহমুদাবাদ বিভিন্ন সাহিত্য ও ভাষাগত ঐতিহ্যে পারদর্শী। তিনি দক্ষিণ এশিয়া এবং তার বাইরেও ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন ব্যাপকভাবে প্রশংসিত বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিত। তাঁর সমস্ত লেখায়, বক্তব্যে এবং বৃহত্তর জনসাধারণের মঞ্চে, তিনি ন্যায়বিচার, বহুত্ববাদ এবং সংহতির গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন এবং সর্বদা সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার কথা বলেছেন।"
ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশন ছাড়াও তাঁর গ্রেপ্তারির প্রতিবাদ জানিয়েছে কংগ্রেস, সিপিআইএম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কংগ্রেস মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক্স-হ্যান্ডেলে এক পোস্টে পবন খেরা জানিয়েছেন, মাহমুদাবাদকে "চিন্তাশীল" ফেসবুক পোস্টের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। "একজন ইতিহাসবিদ এবং শিক্ষাবিদকে হিংসায় উস্কানি দেওয়ার জন্য নয় বরং এর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করার জন্য জেলে পাঠানো হয়েছে। তার অপরাধ? ক্ষমতার সামনে সত্য বলার সাহস, বিজেপির নিন্দনীয় সাম্প্রদায়িক চরিত্র উন্মোচন এবং বুক চাপড়ানো জাতীয়তাবাদের ভণ্ডামির কথা প্রকাশ্যে বলা।"
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক মাহমুদাবাদ তাঁর পোষ্টে লিখেছিলেন, "আমি খুব খুশি যে এত দক্ষিণপন্থী ভাষ্যকার কর্নেল সোফিয়া কুরেশীর প্রশংসা করছেন, কিন্তু পাশাপাশি তারা তো একইভাবে গণপিটুনি, নির্বিচারে বুলডোজার চালানোর শিকার এবং বিজেপির ঘৃণা ছড়ানোর শিকার অন্যান্যদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সুরক্ষিত রাখা হোক এরকম দাবিও তো করতে পারেন। দুই মহিলা সৈনিকের তথ্য উপস্থাপনের দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ, তবে এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে, অন্যথায় এটি কেবল ভণ্ডামি হবে।"
ভারতীয় ইতিহাসবিদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, লেখক, কলামিস্ট, কবি এবং ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদ। তিনি মাহমুদাবাদের রাজা মোহাম্মদ আমির আহমদ খানের নাতি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন