
৩৬ বছরের মহাদেবীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ৪৫ কিলোমিটার মিছিলে পা মেলালেন ৩০,০০০-এরও বেশি মানুষ। মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের ঘটনা। মহাদেবী ৩৬ বছর বয়সি একটি হাতি। চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য তাকে অনন্ত আম্বানির ‘ভান্তারা’-য় (Vantara) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যার প্রতিবাদে এই মিছিল। পাশাপাশি কোলাপুরের জেলাশাসকের কাছে প্রায় দু'লক্ষ মানুষের সই সম্বলিত এক স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
জানা গেছে, কোলাপুরের এক জৈন মঠে থাকত মহাদেবী। ১৯৯২ সাল থেকে তাকে সেখানে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাকে ভালোভাবে দেখাশোনা করা হত না বলে অভিযোগ তোলে কিছু মানুষ। এমনকি তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও ওঠে। এরপরেই মহাদেবীর স্থানান্তর নিয়ে মামলা ওঠে বোম্বে হাইকোর্টে। ১৬ জুলাই তাকে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় আদালত। যে নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়।
পেটা (PETA - People for the Ethical Treatment of Animals) এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি (HPC) কর্তৃক জমা দেওয়া পশুচিকিৎসা এবং আলোকচিত্রগত প্রমাণে দেখা গেছে, মহাদেবী আর্থ্রাইটিস, পা পচা, ক্ষত এবং অতিরিক্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত পায়ের নখের সমস্যায় ভুগছে। তার মানসিক যন্ত্রণাও আছে। এরপরেই ২৮ জুলাই হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী দু'সপ্তাহের মধ্যে স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয় আদালত। ১১ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
আদালতের নির্দেশের পরেই মহাদেবীকে পাঠানো হয়েছে আম্বানীদের ভান্তারায়। এরপরেই প্রতিবাদে পথে নামেন স্থানীয়রা। এই রায়ের বিরোধিতা করে রবিবার ৩ আগস্ট কোলাপুর, সাংলি ও সাতারা জেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ রাস্তায় নামেন। এমনকী মুকেশ আম্বানির সংস্থা জিও-কে বয়কটের ডাকও ওঠে। মাত্র ৪ দিনে প্রায় ১.৫ লক্ষ মানুষ জিও সিম ছেড়েছেন বলেও কোনও কোনও সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পেটা-র সাহায্য নিয়ে জোর করে আম্বানিদের ভান্তারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে মহাদেবীকে। এই প্রসঙ্গে কৃষক নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ রাজু শেট্টি অভিযোগ করেন, "পেটা আসলে রিলায়েন্সের হয়ে কাজ করছে। জৈন মঠের মতো জায়গা থেকে হাতিকে সরিয়ে ভান্তারায় নিয়ে যাওয়াটা ষড়যন্ত্র"। তিনি আরও বলেন, “এটি পেটা (পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালস) এর একটি কৌশল, যারা মন্দিরের হাতি আটক করার জন্য (মিঃ অনন্ত) আম্বানির স্বার্থের দাস হিসেবে কাজ করে,। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পেটার প্রধান কার্যালয়ে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করব এবং ভারতে তাদের লাইসেন্স বাতিল করার দাবি করব।” তিনি এটিকে এক ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেন।
অন্যদিকে, এই প্রসঙ্গে ভান্তারার পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, তারা কেবলমাত্র আদালতের নির্দেশ পালন করেছে। হাতির কল্যাণের জন্য তাদের সক্ষমতা এবং ট্র্যাক রেকর্ডের ভিত্তিতে এইচপিসি কর্তৃক প্রাপক হিসাবে তাদের মনোনীত করা হয়। বর্তমানে যেখানে মহাদেবী রয়েছে, সেখানে অন্যান্য হাতির সাথে সামাজিকীকরণ, হাইড্রোথেরাপি সহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে কোলাপুরে এই মিছিলের পর ভান্তারা কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় নেতা এবং জৈন মঠের প্রধানের সাথে দেখা করেন মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রকাশ আবিটকর। সাক্ষাতের পর তিনি জানিয়েছেন, মহাদেবীকে ফেরানোর জন্য প্রয়োজনীয় সকল আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিন বছর বয়সে ১৯৯২ সালে নন্দনীর জৈন মঠে নিয়ে আসা হয় মহাদেবীকে। তাকে ছোটবেলাতে প্রায় সময়ই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত। প্রায়শই ধর্মীয় শোভাযাত্রা, ভিক্ষা এবং মহরমের শোভাযাত্রা সহ জনসাধারণের অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন