Plastic Pollution: বিপদের নাম প্লাস্টিক, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর জমছে টন টন বর্জ্য, বিপন্ন জীববৈচিত্র্য

People's Reporter: সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ২০২৪ সালে পৃথিবীজুড়ে মোট ২০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের প্রতিটি মানুষ পৃথিবীর বুকে বছরে ২৮ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলেছেন।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকী ছবি UNEP ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত
Published on
Summary

* বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ।

* বিশ্বে প্রতি বছর সমুদ্রের বুকে জমা হচ্ছে ১৪ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক।

* বিপুল পরিমাণ এই বর্জ্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য।

* বিশ্বে সবথেকে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য আসছে আমেরিকা থেকে।

আমরা খুব একটা গা করিনা। বাজার, দোকানে গিয়েও প্লাস্টিকের ব্যাগ না পেলে গোসা হওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এছাড়াও দৈনন্দিন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও প্লাস্টিককে সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা কার্যত অসম্ভব হয়ে গেছে। প্যাকেজড পানীয় জল থেকে চিপস, জামা কাপড় কেনা থেকে মাছ, সবজি - সবেতেই সশব্দে প্লাস্টিকের উপস্থিতি। আর এই প্লাস্টিকই ধীরে ধীরে থাবা বসাচ্ছে পরিবেশে, জীববৈচিত্র্যে, মানুষের জীবনে। আমাদের চরম নিঃস্পৃহতার কারণেই চারপাশ থেকে আমাদের ঘিরে ফেলছে প্লাস্টিক দৈত্য।

১৯৫০ সালে সারা বিশ্বে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হত ২ মিলিয়ন টনের আশেপাশে। ২০১৫ সালে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪১৯ টনের বেশি। বর্তমানে তা ৪৬০ টনের কাছাকাছি। তথ্য বলছে এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালে বিশ্বে প্লাস্টিক উৎপাদিত হবে ১৪৮০ মিলিয়ন টনের বেশি। সময়ের সঙ্গে প্লাস্টিকের উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। যা ক্রমেই জমছে আমাদের এই পৃথিবীতে, জমছে সমুদ্রের জলে, নদী নালায়। দফারফা হচ্ছে পরিবেশের।

সম্প্রতি এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালে পৃথিবীজুড়ে মোট ২০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের প্রতিটি মানুষ পৃথিবীর বুকে বছরে ২৮ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলেছেন। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৬৬ শতাংশ জনসংখ্যা এমন এলাকায় বসবাস করেন যেখানে স্থানীয় ব্যবস্থাপনার ক্ষমতার চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বেশি।

রাষ্ট্রসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (UNEP) সম্প্রতি জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন আনুমানিক ২০০০ ট্রাক প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটি সমুদ্র, নদী, জলাশয়ে। UNEP-এর সমীক্ষা অনুসারে, প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা খুবই গুরুতর আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তন, বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয় এবং সম্পদের ব্যবহার সহ অন্যান্য পরিবেশগত চাপের পাশাপাশি প্লাস্টিকের পরিবেশগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিগুলির দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

আর্থ ডট ওআরজি-র তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বে প্রতিবছর সমুদ্রে জমা হচ্ছে ১৪ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক। এখনই যদি এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়ে সেক্ষেত্রে ২০৪০ সালে এই পরিমাণ দাঁড়াবে ২৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন। যদি এর সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিককে যুক্ত করা হয় সেক্ষেত্রে ওই একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৬০০ মিলিয়ন টন। বিপুল পরিমাণ এই প্লাস্টিকের কারণে ক্ষতি হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের। বিপদের মুখে পড়ছে বহু জলজ প্রাণী।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যত প্লাস্টিক উৎপাদিত হয় তার ৯০ শতাংশই পুনঃব্যবহারযোগ্য নয়। যদিও প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্রমশই বাড়ছে। ফলে প্রতিদিনই বিরাট পরিমাণে বর্জ্য প্লাস্টিক জমছে পৃথিবীর বুকে এবং ক্রমশ ক্রমশ যা গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করছে।

এখনও পর্যন্ত সবথেকে বেশি প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে প্যাকেজিং শিল্পে। পরিমাণের হিসেবে যা প্রায় ৪৪ শতাংশ। এরপরেই আছে নির্মাণ শিল্প, স্বয়ংচালিত শিল্প ইত্যাদিতে। সঠিক পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে এইসব ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পারলে আগামী দিনে তা পরিবেশের পক্ষে লাভদায়ক হয়ে উঠবে।

প্লাস্টিকসুপ ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ১৯৫০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় ৯.২ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক তৈরি হয়েছে। মোট তৈরি হওয়া প্লাস্টিকের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যবহারের ১ মাসের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। বছরের পর বছর এই প্লাস্টিক বর্জ্য জমতে জমতে এখন তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন টনে। তথ্য বলছে, বিশ্বে সবথেকে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য আসে আমেরিকা থেকে। এরপরেই তালিকায় আছে ভারত, চিন, রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো সহ ১২টি দেশের নাম।

তথ্য অনুসারে, বিশ্বজুড়ে কোকা কোলার বোতলের কারণে সবথেকে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। ২০২০ সালের এক সমীক্ষায় দেখানো হয়েছিল প্রতি মিনিটে কোকাকোলা ১,৬৭,০০০ প্লাস্টিকের বোতল তৈরি করে। কোকাকোলার সমস্ত প্লাস্টিকের বোতলকে যদি এক লাইনে দাঁড় করানো হয় তাহলে তা ৩১ বার পৃথিবী থেকে চাঁদে গিয়ে ফিরে আসবে।

২০১৭ সালে বিজ্ঞানীদের এক দল সমীক্ষা করে দেখেছিল সমুদ্রে যত পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয় তার অধিকাংশই আসে বিভিন্ন নদী দিয়ে। যার মধ্যে আছে নীল, ইয়াংসি এবং আমাজন। যদিও ২০২১ সালের সমীক্ষায় দেখা যায় ১০টি নদী নয়। বরং বিশ্বজুড়ে ছোটো বড়ো প্রায় ১০০০ টি প্রতিদিন বিরাট পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে পৌঁছে দিচ্ছে। এইসব নদীর বেশিরভাগই জনবহুল এলাকা দিয়ে প্রবাহিত। এই তালিকায় শীর্ষে আছে ফিলিপাইন্সের ম্যানিলা দিয়ে প্রবাহিত নদী প্যাসিগ।  

সুইস পরিবেশগত পরামর্শদাতা এবং গবেষণা সংস্থা আর্থ অ্যাকশন জানাচ্ছে, কেবল পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে প্লাস্টিকের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে তৈরি হওয়া সঙ্কট সমাধান করা সম্ভব নয়। এই সমস্যা মেটাতে রাষ্ট্রসংঘের চুক্তির মাধ্যমে কর্পোরেট দায়িত্ব, সহযোগিতা এবং কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

ছবি প্রতীকী
Plastic Pollution: বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে প্লাস্টিক দূষণ, বর্জ্য উৎপাদনে শীর্ষে কোন ১০ দেশ?
ছবি প্রতীকী
Plastic Waste: বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে প্লাস্টিক দূষণ, ১ বছরে রেকর্ড পরিমাণ বর্জ্য

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in