Zohran Mamdani: ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'কমিউনিস্ট' হুঁশিয়ারি উড়িয়ে নিউইয়র্কের মেয়র পদে জয়ী জোহরান মামদানি

People's Reporter: সম্প্রতি ডেমোক্র্যাট দল থেকে কিছুটা সরে যাওয়া শ্রমিক শ্রেণীর ভোটারদের জন্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মূল অর্থনৈতিক বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করার ক্ষেত্রে জোহরান মামদানি বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছেন।
মেয়র নির্বাচনে ভোটদানের পর জোহরান মামদানি
মেয়র নির্বাচনে ভোটদানের পর জোহরান মামদানিছবি - জোহরান মামদানির এক্স হ্যান্ডেল থেকে সংগৃহীত
Published on

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) হুঁশিয়ারি উড়িয়ে নিউ ইয়র্কের মানুষ মেয়র পদে নির্বাচিত করলেন ৩৪ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানিকে (Zohran Mamdani)। তিনিই নিউ ইয়র্ক সিটির সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হতে চলেছেন। জয়ের পথে তিনি পরাজিত করেছেন নিউ ইয়র্কের স্টেট গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে। এই নির্বাচনী লড়াই থেকে রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস সিলওয়া আগেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। জোহরান মামদানি চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ারের ছেলে।

সম্প্রতি ডেমোক্র্যাট দল থেকে কিছুটা সরে যাওয়া শ্রমিক শ্রেণীর ভোটারদের জন্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মূল অর্থনৈতিক বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করার ক্ষেত্রে জোহরান মামদানি বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছেন। বিশেষ করে, বামপন্থীদের সাংস্কৃতিক নীতিগুলিকে সঙ্গে নিয়েই তিনি কাজ করেছেন বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। কিন্তু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার বিস্তৃত অংশে এই ধরণের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য নন এবং রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অতি-বাম মুখ হিসেবে তাঁকে বিশেষিত করা হয়েছে। যদিও, মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্ক সিটিতে তিনিই বিজয়ী হয়েছেন।

নিজের নির্বাচনী প্রচারে মামদানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শহরের বাস ভাড়ামুক্ত করার, স্থিতিশীল ভাড়া স্থগিত করার, সর্বজনীন শিশু যত্ন প্রদান করার, ২০৩০ সালের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করার এবং বৃহৎ কর্পোরেশন এবং নিউ ইয়র্কের ধনী ১% বাসিন্দার উপর কর বাড়িয়ে সাধারনের জীবনযাত্রার খরচ কমানোর।

মাত্র একবছর আগেও রাজনৈতিক মহলে সেভাবে পরিচিত ছিলেন না জোহরান মামদানি। যদিও এই মুহূর্তে ভোটে জিতে তিনিই নিউ ইয়র্কের মেয়র। রাজনৈতিক মহলে যার পরিচয় ডেমোক্রেটিক সোস্যালিস্ট হিসেবেই। যদিও প্রচার পর্বে মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে উল্লেখ করে তাঁকে ভোট না দেবার আহ্বান জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এবারের মেয়র নির্বাচনে ইসলাম বিদ্বেষ এবং বর্ণবিদ্বেষে ভরা বিরোধী প্রচারের সামনে, মামদানি উর্দু, হিন্দি এবং স্প্যানিশ ভাষায়, প্রচার চালিয়েছিলেন। নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভোটারদের কাছে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীদের কাছে পৌঁছাতে তাঁর এই কৌশল বিশেষ কাজে লেগেছে। তাঁর মুসলিম ধর্ম গ্রহণ, গাজা এবং প্যালেস্তিনীয় অধিকারের পক্ষে তাঁর সমর্থন এবং অভিবাসীদের পক্ষে তাঁর দৃঢ় অবস্থান তাঁকে মেয়রের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে দেয়।

প্রসঙ্গত, জোহরান মামদানির অপ্রত্যাশিত উত্থান ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে মধ্যপন্থী এবং বামপন্থী ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ককে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। দলের মধ্যেই বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব ভোটের আগে মামদানির প্রতি কেবল প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানিয়েছিলেন। যদিও তাঁদের চমকে দিয়েই নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখে চিহ্নিত ‘কমিউনিস্ট প্রার্থী’ মামদানি।

তাঁর সম্পর্কে বিরোধী নির্দল প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমো বলেছিলেন যে "ডেমোক্র্যাট পার্টিতে গৃহযুদ্ধ চলছে।" ভোট দেবার পর তিনি জানিয়েছিলেন, "এখানে এখন একটি চরম উগ্র বামপন্থী ধারা রয়েছে, যা সমাজতন্ত্রীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং যারা মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটদের চ্যালেঞ্জ করছে। আমি একজন মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট।"

সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক গ্রান্ট রিহার ফলাফল প্রকাশের আগেই জানিয়েছেন, মেয়র জোহরান মামদানিকে "এই সমস্ত জঘন্য রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে" এক কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। তাঁর মতে, এবার সকলেই তাঁদের গোপন অস্ত্র বের করবে এবং নিউ ইয়র্কের মত এক শহর পরিচালনা করা খুবই কঠিন কাজ।

নিউ ইয়র্ক সিটিতে মামদানির জয়ের পাশাপাশি, নিউ জার্সিতে, নৌবাহিনীর প্রাক্তন হেলিকপ্টার পাইলট ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী মিকি শেরিল, ট্রাম্প সমর্থিত ব্যবসায়ী রিপাবলিকান জ্যাক সিয়াটারেলিকে পরাজিত করেছেন।

ভার্জিনিয়ার গভর্নর পদের দৌড়ে, ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী অ্যাবিগেল স্প্যানবার্গার ভার্জিনিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর উইনসাম আর্ল-সিয়ার্সকে পদচ্যুত করার পথে এক রিপাবলিকান প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন।

কে এই জোহরান মামদানি?

উগান্ডার কাম্পালায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা মামদানির। সাত বছর বয়সে পরিবারের সাথে তিনি নিউ ইয়র্ক সিটিতে আসেন। খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের ছেলে মামদানি ব্রঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্স পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করেন। তিনি স্কুলের প্রথম ক্রিকেট দলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ২০১৪ সালে বোডোইন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক জোহরান তাঁর কলেজে প্রথম স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন চ্যাপ্টার প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৮ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব পান।

জোহরান মামদানিকে নিয়ে বিতর্ক

জোহরান মামদানিকে নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত মার্কিন সমাজ। একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন তাঁকে সরাসরি ‘কমিউনিস্ট’ বলে অভিহিত করেছেন, অন্যদিকে অনেকেই তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ বলতে নারাজ।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের প্রাক্কালে ট্রুথ সোশ্যালের এক পোষ্টে জানিয়েছিলেন, "যদি কমিউনিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানি নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে জয়ী হন, তাহলে আমার ভালোবাসার প্রথম স্থানে প্রয়োজন অনুসারে ন্যূনতম অর্থ ছাড়া ফেডারেল তহবিল দান করার সম্ভাবনা খুবই কম।" তিনি আরও বলেন, "রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি খারাপের কাছে ভালো অর্থ পাঠাতে চাই না।"

অন্যদিকে, দ্য অবজারভার-এর ডিজিটাল ভার্সনে আমারিস ও’কনোর এক প্রতিবেদনে মামদানি সম্পর্কে লিখেছেন, “কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত অর্থনীতির পক্ষে মামদানি নন; তাই তিনি কমিউনিস্ট হতে পারেন না। একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে, তার রাজনৈতিক দর্শনে অবশ্যই সমাজতান্ত্রিক উপাদান রয়েছে, কিন্তু যদি কমিউনিজম এবং বিপ্লবী সমাজতন্ত্র অতি-বামপন্থী হয়, তাহলে একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী রাজনৈতিক কেন্দ্রের অনেক কাছাকাছি চলে আসছেন।

মেয়র নির্বাচনে ভোটদানের পর জোহরান মামদানি
নিউ ইয়র্কের সম্ভাব্য মেয়র ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানি! 'উন্মাদ কমিউনিস্ট' - কটাক্ষ ট্রাম্পের
মেয়র নির্বাচনে ভোটদানের পর জোহরান মামদানি
Donald Trump: ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর! সরকারি দপ্তরের ১৩৯ জন কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হল

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in