
* মাইক্রোসফটের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রতিবাদ জানান দুই মহিলা কর্মী।
* ইজরায়েলকে এআই প্রযুক্তি বিক্রির বিরুদ্ধে তাঁরা প্রতিবাদ জানান।
* তাঁদের অভিযোগ, এই প্রযুক্তি প্যালেস্তাইনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে ইজরায়েল।
প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলি হামলার প্রতিবাদে সরব দুই প্রযুক্তিবিদ। মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, প্রাক্তন সিইও স্টিভ বালমার এবং বর্তমান সিইও সত্য নাদেলার সামনেই প্যালেস্টাইন গণহত্যার বিরোধিতা করে তীব্র প্রতিবাদে শামিল হলেন বন্যা আগরওয়াল ও ইবতেহাল আবাউসসাদ। জানা যাচ্ছে এই ঘটনার পরই তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মাইক্রোসফটের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে মাইক্রোসফটের সদর দফতরে ৫ এপ্রিল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানেই সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন দুই প্রযুক্তিবিদ। তাঁদের মতে প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলি হামলা থেকে মুনাফা অর্জন করছে মাইক্রোসফট।
এপি-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, সোমবার ওই দুই কর্মীর একজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং অন্য এক মহিলা কর্মী আগেই ইস্তফা দিয়েছিলেন। দু’সপ্তাহের নোটিশ পিরিয়ডের পর ১১ এপ্রিল থেকে তাঁর ইস্তফা কার্যকর হবার কথা। কিন্তু সোমবারই তাঁকে জানানো হয়েছে ইস্তফার নির্ধারিত দিনের পাঁচ দিন আগে থেকেই তাঁর ইস্তফা কার্যকর করা হচ্ছে।
ওইদিন মাইক্রোসফটের এআই সিইও মুস্তাফা সুলেইমানের বক্তব্য চলাকালীন প্রতিবাদ জানিয়ে ইবতিহাল অ্যাবোউসাদ উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। ইবতিহালের প্রতিবাদের জেরে বক্তৃতা থামিয়ে দিতে বাধ্য হন মুস্তাফা সুলেইমান। কারণ রেডমন্ড, ওয়াশিংটন থেকে পুরো অনুষ্ঠানটির লাইভস্ট্রিমিং চলছিল। পরে ইবতিহালকে নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়। জানা গেছে, মাইক্রোসফটের কানাডার সদরদপ্তর টরেন্টোয় কাজ করতেন ইবতিহাল।
অনুষ্ঠান চলাকালীন বন্যা মঞ্চে দাঁড়িয়ে সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি চিৎকার করে বলেন, “আপনাদের ধিক্কার। আপনারা ভণ্ড।” বন্যা জানান, মাইক্রোসফটের এআই ও ক্লাউড প্রযুক্তি ইজরায়েল সরকারকে সামরিক দমন-পীড়নে সহায়তা করছে, যা গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
এক ইমেলে সহকর্মীদের উদ্দেশে বন্যা লেখেন, “মাইক্রোসফটের অ্যাজিওর ক্লাউড এবং এআই ডেভেলপমেন্ট ইজরায়েল সেনার হাতে এক ধ্বংসাত্মক প্রযুক্তিগত মেরুদণ্ড তুলে দিয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমেই গাজায় গণহত্যা চালানো হচ্ছে।"
ওই অনুষ্ঠানে বন্যাকে কয়েকজন কর্মী সমর্থনও করেন। তাঁদের কেউ কেউ বলেন, “মাইক্রোসফটের প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাজায় ৫০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এই রক্তমাখা উদ্যাপন ধিক্কারের যোগ্য।”
বন্যা আরও জানান, তিনি দেড় বছর ধরে মাইক্রোসফটে কাজ করছিলেন এবং এই সময়েই দেখেছেন কীভাবে সংস্থা ইজরায়েলকে সরাসরি সহায়তা করছে, একটি এমন রাষ্ট্রকে যা ১৯৪৮ সাল থেকে প্যালেস্টাইন দখলে রাখার জন্য অভিযুক্ত।
তিনি বলেন, “প্রযুক্তি দিয়ে আমরা কাদের হাত শক্ত করছি? এই প্রশ্ন প্রতিটি প্রযুক্তিবিদের নিজের কাছে রাখা উচিত। আমি অন্যদেরও ইস্তফা দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
তবে এবারই প্রথম নয়। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলার এক বৈঠক থেকে ইজরায়েলের সঙ্গে এআই চুক্তির প্রতিবাদ করার জন্য পাঁচ কর্মীকে বৈঠক থেকে বের করে দেওয়া হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারির ওই প্রতিবাদে অংশ নেওয়া পাঁচ কর্মীর টি শার্টে লেখা ছিল, “Does Our Code Kill Kids, Satya?” অর্থাৎ, আমাদের কোড কি শিশু হত্যা করছে, নাদেলা?
সংবাদসংস্থা এপি নিজেদের এক অন্তঃতদন্তে মাইক্রোসফটের অভ্যন্তরীণ তথ্য এবং নথি থেকে সংগৃহীত বিবরণের ভিত্তিতে জানিয়েছিল, ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এ হামাস জঙ্গিদের হামলার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কর্তৃক আজুরের মাধ্যমে এআই মডেলের ব্যবহার প্রায় ২০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রিপোর্ট সামনে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়াতে বহু মানুষ সরব হন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন