“বহু বছর ধরে চলা বাণিজ্যগত বৈষম্য” দূর করার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। যার ফলে ৭০টিরও বেশি দেশের উপর পাল্টা শুল্ক (reciprocal tariff) আরোপ করা হয়েছে। এই নতুন শুল্কের হার ১০% থেকে ৪১% পর্যন্ত বিস্তৃত। যেখানে পাকিস্তানের উপর ১৯% শুল্ক আরোপ করা হলেও ভারতের উপর শুল্ক ২৫% করা হয়েছে। সর্বাধিক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সিরিয়ার উপর (৪১%)।
এই পদক্ষেপটি ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে বৈশ্বিক বাণিজ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি এবং অন্য দেশগুলির "অন্যায্য বাণিজ্য নীতি"র বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে।
ভারত, ব্রুনেই, কাজাখস্তান, মলডোভা এবং তিউনিশিয়া ২৫% শুল্কের আওতায় এসেছে। এদিকে, কানাডার উপর শুল্ক ২৫% থেকে বাড়িয়ে ৩৫% করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কানাডা "অবৈধ মাদক সংকট" রোধে ব্যর্থ হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এই কারণেই শুল্ক বৃদ্ধি।
ট্রাম্প বলেন, “এটি জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একতরফা শুল্কের শিকার হয়েছি।”
হোয়াইট হাউস যে হারে বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপ করেছে, তার তালিকা:
৪১%: সিরিয়া
৪০%: লাওস, মায়ানমার
৩৯%: সুইজারল্যান্ড
৩৫%: ইরাক, সার্বিয়া, কানাডা
৩০%: আলজেরিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা
২৫%: ভারত, ব্রুনেই, কাজাখস্তান, মলডোভা, টিউনিশিয়া
২০%: বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম
১৯%: পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড
১৫%: ইজরায়েল, জাপান, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, ঘানা এবং অন্যান্য
১০%: ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে যেসব পণ্যে বর্তমানে শুল্কহার ১৫%-এর বেশি, সেগুলিকে নতুন শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, যেসব পণ্যে শুল্ক ১৫%-এর নিচে, সেগুলিকে বাড়িয়ে ১৫%-র সমতুল্য করা হবে।
নতুন শুল্ক আদেশে বলা হয়েছে, সাত দিনের মধ্যে অধিকাংশ দেশের উপর শুল্ক কার্যকর হবে। তবে কানাডার ক্ষেত্রে নতুন ৩৫% শুল্ক ১ আগস্ট থেকেই কার্যকর হচ্ছে।
৭ আগস্টের আগে যেসব পণ্য জাহাজে উঠবে এবং ৫ অক্টোবরের মধ্যে আমেরিকায় পৌঁছবে, সেগুলিকে নতুন শুল্কের আওতা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত বাণিজ্য চুক্তি এখনো সম্পন্ন হয়নি। ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, স্টকহোমে সদ্য সমাপ্ত আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে চুক্তি অনুমোদনের জন্য এখনও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্মতির প্রয়োজন। চীনকে ১২ আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
ভারতের উপর আরোপিত ২৫% শুল্ক দুই দেশের মধ্যে চলমান আলোচনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, “ভারতের বাজার বরাবরই কিছুটা বন্ধ প্রকৃতির। এছাড়াও ভূরাজনৈতিক কিছু ইস্যুও রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ব্রিকস সদস্যপদ, রাশিয়া থেকে তেল কেনা - এই বিষয়গুলোও প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতের সঙ্গে একটি গ্রহণযোগ্য বাণিজ্য চুক্তি এখনও অনেক দূরে।”
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ২৯% থেকে কমিয়ে ১৯% করা হয়েছে। অর্থাৎ ১০% শুল্ক কমানো হয়েছে পাকিস্তানের উপর থেকে। এছাড়া কম্বোডিয়ার ৪৯% শুল্ক কমিয়ে ১৯% করা হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন