
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশের পর পররাষ্ট্র দপ্তরে কূটনৈতিক কর্মী ছাঁটাইয়ের এক বড়সড় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। শুক্রবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে একসাথে ১,৩৫০ জনের বেশি আধিকারিক ও কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপে বিশ্বজুড়ে আমেরিকার কূটনৈতিক প্রভাব কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
সরকারি দফতরে গণছাঁটাই যে আসন্ন তা মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পরই বোঝা গিয়েছিল। গণছাঁটাইয়ের কবলে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ১,১০৭ জন সিভিল সার্ভিস সদস্য এবং ২৪৬ জন ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তা।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ছাঁটাই হওয়া কর্মকর্তাদের ইমেইলের মাধ্যমে এই খবর জানানো হয়েছে। ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তাদের ১২০ দিনের মধ্যে ছাঁটাই করা হবে এবং সিভিল সার্ভিসের কর্মীদের ৬০ দিনের নোটিশের পর বহিষ্কৃত করা হবে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত স্টেট ডিপার্টমেন্টের সদর দপ্তরে সহকর্মীদের বিদায় জানাতে আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অনেককেই কাঁদতে কাঁদতে জিনিসপত্রের বাক্স হাতে বাইরে আসতে দেখা যায়।
নিউ জার্সির ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যান্ডি কিম বলেন, “এই মুহূর্তে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসা মানুষদের দেখা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। তাঁরা কেবলমাত্র এই দেশের সেবা করতে চেয়েছিলেন।”
সুপ্রিম কোর্টের এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ের তিন দিন পর এই গণছাঁটাই হল। সুপ্রিম কোর্ট বিচারকদের স্বাক্ষরহীন একটি নির্দেশিকায় জানায়, ট্রাম্প চাইলে কর্মী ছাঁটাই করতে পারেন। এতে সুপ্রিম কোর্টের কোনও আপত্তি নেই। যদিও মামলা এখনও চলবে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়র জানিয়েছিলেন, “এই মুহূর্তে আদালতের সামনে নির্দিষ্ট পুনর্গঠন পরিকল্পনাগুলি নেই, ফলে আমরা সেগুলির বৈধতা নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না”।
বিচারপতি কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন একমাত্র ভিন্নমত পোষণকারী হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন, “রাষ্ট্রপতির এমন একতরফা সিদ্ধান্ত আমাদের সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ জানায়। সরকার পুনর্গঠনের ক্ষমতা কংগ্রেসের, রাষ্ট্রপতির একার নয়”।
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ছাঁটাই প্রসঙ্গে বলেন, “ব্যুরো বন্ধ হলে সেসব পদের আর দরকার পড়ে না। এটা আসলে কাঠামোগত পুনর্গঠনের অংশ।”
তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন AFSA। তাদের মতে, “এই সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থে ভয়ঙ্কর আঘাত।”
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, স্টেট ডিপার্টমেন্ট গত বছর ৮০,০০০ এর বেশি লোক নিয়োগ করেছিল, যার মধ্যে ১৭,৭০০ জন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই গণছাঁটাই শুধু কূটনীতির ওপর নয়, বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন