
দক্ষিণ কোরিয়াতে রাজনৈতিক টালমাটাল অব্যাহত। প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সামরিক আইন (মার্শাল ল) জারি করেও প্রবল বিক্ষোভের মুখে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। রাজধানী সিওলের রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বিরোধী দলের সমর্থকরা। প্রবল চাপের মুখে ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কিম ইয়ং হিউন।
উল্লেখ্য, সামরিক আইন মূলত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কিমেরই মস্তিস্কপ্রসূত। সংসদে সেনাবাহিনী মোতায়েনও তাঁর নির্দেশেই হয়েছিল। তবে ডেপুটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কিম সিওন-হো জানিয়েছেন – তিনি এই সামরিক আইন জারি করার বিরোধিতা করেছিলেন। সাংসদের এক শুনানিতে তিনি নিজের দায় স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন।
যদিও এখানেই থেমে থাকতে চাইছে না বিরোধীরা। তাঁরা সরাসরি প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চাইছেন। প্রধান বিরোধী দল ‘ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’র সাংসদ কিম সেউং-ওন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সকালের অধিবেশনে বলেছেন - “ইয়ুন সুক-ইওল সরকারের জরুরি সামরিক আইনের ঘোষণা আমাদের জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও ভয়ের সৃষ্টি করেছে।” ডেমোক্রেটিক পার্টির সাংসদরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাষ্ট্রপতিকে বরখাস্ত (ইম্পিচমেন্ট) করার জন্য সংসদে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
ক্ষমতাসীন ‘পিপলস পাওয়ার পার্টি’ এই সংকট নিয়ে নিজেরাই বিভক্ত। তবে তাঁরা প্রেসিডেন্ট ইউনের ইম্পিচমেন্টের বিরোধিতা করবেন। ৩০০ সদস্যের আইনসভায় শাসক দলের সদস্য সংখ্যা ১০৮ জন। বিরোধীদের সদস্য সংখ্যা ১৯২। রাষ্ট্রপতিকে বরখাস্ত (ইম্পিচমেন্ট) করতে গেলে প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অন্তত ৮ জন শাসক দলের সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে। কারণ দক্ষিণ কোরিয়ার আইন অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে বরখাস্ত করতে হলে দুই তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার গভীর রাতে জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সামরিক আইন (মার্শাল ল) ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘কমিউনিস্ট বাহিনী’-র থেকে জাতিকে রক্ষা করতে এবং রাষ্ট্রবিরোধীদেরকে দমন করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এরপরেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ। বিরোধী রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, এমনকি সামরিক বাহিনীও রাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে। রাজধানী সিওলের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান হাজার হাজার মানুষ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হয় একাধিক জায়গায়। ধর্মঘটের ডাক দেয় দেশের বৃহত্তম শ্রমিক ইউনিয়ন।
সামরিক আইন জারি হওয়ার পরেই বিরোধী দলের এক সদস্য এর বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে প্রস্তাব তোলেন। ৩০০ সদস্যের মধ্যে ১৯০ জন এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। এমনকি প্রেসিডেন্টের দলের অনেক সদস্যই এই প্রস্তাবের পক্ষেই ভোট দিয়েছেন। ফলে ‘মার্শাল ল’ চালু হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন