
দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে। জরুরি অবস্থা জারি করেও পিছু হটার পর প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ল-এর বিরুদ্ধে বুধবার ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব এনেছে। যে ঘটনায় নতুন করে অস্থিরতা ছড়িয়েছে এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে।
গতকাল আচমকাই জরুরি অবস্থা ও সামরিক আইন জারি করার পর সংসদ ভবন ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৯০ জন এই আইনের বিরোধিতা করে পাল্টা প্রস্তাব পাশ করায়। মুহূর্তের মধ্যে সংসদ ভবনের বাইরে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। সামরিক আইন এবং জরুরি অবস্থা জারি করে সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক কার্যকলাপে নিষেধাজ্ঞার চেষ্টা করা হয়েছিল।
এই ঘটনার পরেই কোরিয়ান কনফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি (ডিপি) অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করেছে। ২০২২ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ল। সে দেশের প্রধান বিরোধী দলের পাশে দাঁড়িয়েছে অন্যান্য ছটি বিরোধীর দল। এই দলগুলি ঐক্যবদ্ধভাবে সংসদে রাষ্ট্রপতিকে বরখাস্ত করার দাবিতে প্রস্তাব পেশ করেছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরুর কথা।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির সামরিক আইন জারি করার সঙ্গে সম্মত হননি তাঁর নিজের দলেরই বহু সাংসদ। সূত্র অনুসারে, এদের অনেকেই বিরোধীদের আনা ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাবের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
মঙ্গলবার গভীর রাতে জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সামরিক আইন (মার্শাল ল) ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘কমিউনিস্ট বাহিনী’-র থেকে জাতিকে রক্ষা করতে এবং রাষ্ট্রবিরোধীদেরকে দমন করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপরেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ। বিরোধী রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, এমনকি সামরিক বাহিনীও রাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে।
বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ইয়ুন-এর রাজনৈতিক দল পিপল পাওয়ার পার্টির ১০৮ জন তাঁর পক্ষে আছেন। অন্যদিকে বিরোধী জোটের পক্ষে আছে ১৯২ জন। দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাস করাতে গেলে দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগে। যদি ইয়ুন বরখাস্ত হন সেক্ষেত্রে পরবর্তী ৬০ দিন দায়িত্ব পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক সু।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রসঙ্গে চিনের বিদেশ মন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছেন, এটা সম্পূর্ণভাবে তাদের দেশের বিষয়। এই ঘটনার জেরে দক্ষিণ কোরিয়া সফর বাতিল করেছেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত চলতি বছরেই এপ্রিল মাসে এক নির্বাচনে শোচনীয় হারের মুখোমুখি হয় প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক দল পিপল পাওয়ার পার্টি। ওই নির্বাচনে বিরোধীরা প্রায় দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন