
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ হল আওয়ামি লিগ। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধনী কার্যকর হওয়ার পরই বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইউনূস সরকার। পাশাপাশি নির্বাচনেও আর অংশ নিতে পারবে না শেখ হাসিনার দল। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে আওয়ামি লিগ।
সোমবার রাতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, "আওয়ামি লিগ এবং এর সহযোগী সংগঠনসমূহকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।" স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, এই সিদ্ধান্ত ২০২৫ সালের সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারার অধীনে নেওয়া হয়েছে, যেখানে সরকারকে ‘সন্ত্রাসে যুক্ত’ ব্যক্তি বা সংগঠন নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানান, "আওয়ামি লিগের ওপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারির পরপরই দলটির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করা হয়েছে।" কমিশনের মতে, দলটি আর কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ছিল। গত বছরের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী আন্দোলনে শত শত মানুষের প্রাণহানি এবং সহিংসতার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত শুরু হয়।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষে কোনো ধরনের প্রচার, প্রেস বিবৃতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট বা জনসমাবেশ নিষিদ্ধ। রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহাবুদ্দিন রবিবার রাতে এই নির্দেশে স্বাক্ষর করেন।
ইউনূস সরকারের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছে। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, গত বছর জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন, যার পরিপ্রেক্ষিতে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে, বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় না আসা পর্যন্ত আওয়ামি লিগ ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।
আওয়ামি লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল দলটি। তাদের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, "আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তা খুবই চিন্তার বিষয়। এইভাবে নিষিদ্ধ করা যায় না। গণতন্ত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সেখানে সাধারণ মানুষের উপর ব্যাপক অত্যাচারের খবর এসেছে। আমরা চাইবো খুব দ্রুত বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন