
আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি দেওয়া ভারতের ৭টি প্রতিনিধি দলের একটির নেতৃত্বে রয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। বুধবার লাতিন আমেরিকার পানামা সিটিতে বক্তব্য রাখার সময় কেন্দ্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি। শুধু তাই নয়, পূর্বতন কংগ্রেস সরকারের একপ্রকার সমালোচনাই করলেন তিনি। যা ভালো ভাবে মেনে নিতে পারছেন না কংগ্রেসের একাংশ।
শশী থারুর বলেন, "কারগিল যুদ্ধের সময়ও আমরা নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করিনি; উরিতে আমরা গিয়েছিলাম এবং তারপর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পুলওয়ামায় আক্রমণ হয়েছিল। তারপর আমরা কেবল নিয়ন্ত্রণ রেখাই অতিক্রম করিনি, আন্তর্জাতিক সীমানাও অতিক্রম করেছিলাম এবং বালাকোটে সন্ত্রাসবাদীদের সদর দপ্তরে আঘাত করেছিলাম। আর এবার আমরা পাকিস্তানের নয়টি স্থান - জঙ্গি ঘাঁটি, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সন্ত্রাসবাদীদের সদর দপ্তরগুলিতে আঘাত করেছি"।
তিনি আরও বলেন, "আমাদের প্রধানমন্ত্রী এটা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, অপারেশন সিঁদুর-এর প্রয়োজন ছিল, কারণ এই সন্ত্রাসবাদীরা এসে ২৬ জন মহিলার কপাল থেকে সিঁদুর মুছে দিয়েছিল। তাঁরা তাঁদের স্বামীদের হারিয়েছিলেন। এমনকি কিছু মহিলা সন্ত্রাসবাদীদের চিৎকার করে বলেছিলেন, 'আমাকেও মেরে ফেলো'। কিন্তু তারা বলেছিল, 'না, ফিরে যাও, বলো তোমাদের কী হয়েছে।' আমরা সেই মহিলাদের চিৎকার শুনেছি এবং ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে"।
কংগ্রেস সাংসদ এও জানান, "আমরা প্রায় চার দশক ধরে একের পর এক আক্রমণের শিকার হয়েছি। আমাদের জন্য এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় যে আমরা যন্ত্রণা, শোক, ক্ষতি সহ্য করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে থাকবো, আমাদের সাথে কী ঘটছে তা দেখো। দয়া করে আমাদের সাহায্য করো। অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য দয়া করে অপরাধীদের উপর চাপ সৃষ্টি করো"।
২০০৮ সালের মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে থারুর জানান, "আমাদের কাছে সমস্ত প্রমাণ ছিল। এমনকি আমরা একজন সন্ত্রাসবাদীকে জীবিত ধরেও ফেলেছিলাম। একজন অত্যন্ত সাহসী পুলিশ সদস্য জঙ্গি আজমল কাসবকে জীবিত ধরার জন্য নিজের জীবন দিয়েছিলেন। তাকে (আজমল কাসব) শনাক্ত করা হয়েছিল, তার বাড়ি, তার ঠিকানা, পাকিস্তানে তার গ্রামও শনাক্ত করা হয়েছিল।"
তিনি আরও বলেন, "শুধু ভারতই নয়, পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে পাকিস্তানি নিষ্ঠুর হ্যান্ডলারের ভয়ঙ্কর কণ্ঠস্বরের রেকর্ডিং ছিল, যে মুম্বাইয়ের খুনিদের প্রতিদিন মিনিটে মিনিটে নির্দেশনা দিচ্ছিল। হত্যাকাণ্ড চলাকালীন সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই ঘটনার পিছনে থাকা একজনকেও কি বিচারের আওতায় আনা হয়েছে? দোষী সাব্যস্ত করা তো দূরের কথা? কোনও উত্তর নেই। দুঃখের বিষয়, পাকিস্তান সন্ত্রাসকে মদত দেওয়ার নীতি বেছে নিয়েছে।"
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময় বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে থারুরের মন্তব্য কংগ্রেসের অন্দরে অস্বস্তি বাড়িয়েছে। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে কংগ্রেস নেতা উদিত রাজ শশী থারুরে মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, "কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বিজেপির একজন সুপার মুখপাত্র। তিনি বিজেপি নেতাদের চেয়েও বেশি তোষামোদ করছেন মোদীজির। তিনি (শশী থারুর) কি জানেন যে আগের সরকারগুলি কী করত? শশী থারুর ধীরে ধীরে বিজেপির মুখপাত্র হয়ে উঠেছে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন