
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি নিয়ে এবার রাষ্ট্রসংঘে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়ালো ভারত।
পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানের সাথে ৬৫ বছরের পুরনো সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ভারত। শনিবার, রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত পার্বথানেনি হরিশ বলেন, “সন্ত্রাসের বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রস্থল পাকিস্তান যতদিন না আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে সমর্থন বন্ধ করছে, ততদিন এই চুক্তি স্থগিতই থাকবে।”
রাষ্ট্রদূত হরিশ চারটি বিষয়ে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “ভারত এই চুক্তিতে প্রবেশ করেছিল বন্ধুত্বের মনোভাব নিয়ে। কিন্তু পাকিস্তান বারবার সন্ত্রাস ও যুদ্ধের মাধ্যমে এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।” তাঁর দাবি, গত চার দশকে জঙ্গি হামলায় ২০,০০০-এরও বেশি ভারতীয় প্রাণ হারিয়েছেন।
চুক্তির বাস্তবতা প্রসঙ্গে হরিশ বলেন, “সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে এই চুক্তি পর্যালোচনার প্রয়োজন ছিল। ভারত বারবার আলোচনার আহ্বান জানালেও পাকিস্তান তা প্রত্যাখ্যান করেছে।”
পাকিস্তান রাষ্ট্রসংঘে ‘জলই জীবন, যুদ্ধের অস্ত্র নয়’ স্লোগান তুলে চুক্তি স্থগিত নিয়ে আপত্তি তোলে। তারপরই ভারতের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনা করা হয় পাকিস্তানের।
হরিশ আরও বলেন, “এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানই সিন্ধু চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য দায়ী। ভারত অনেক সহ্য করেছে। কিন্তু বর্তমানে সমস্ত সহনশীলতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, "দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হয়েছে ভারত। ভয়ানক ২৬/১১ মুম্বই হামলা থেকে শুরু করে অতি সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর হামলা - বরাবর পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদের বলি হয়েছেন সাধারণ মানুষ। কারণ, ওদের লক্ষ্যই ছিল আমাদের উন্নয়নে, অগ্রগতিতে এবং মূল্যবোধে আঘাত করা।’’
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল আয়ুব খানের মধ্যে ভারত-পাক সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী সিন্ধু এবং তার দুই উপনদী, বিতস্তা (ঝিলম) ও চন্দ্রভাগার (চেনাব) জলের উপরে পাকিস্তানের অধিকার ও কর্তৃত্ব থাকবে। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে তিন উপনদী - বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (সাটলেজ) এবং ইরাবতী (রাভি) নদীর জলে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন