
নেপালে সরকার পতনের তিন দিনের মাথায় গঠিত হল অন্তর্বর্তী সরকার। যে সরকারের দায়িত্ব নিলেন সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি (Sushila Karki)। শুক্রবার রাতে তিনি রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেলের (Ramchandra Poudal) কাছে শপথবাক্য পাঠ করেন। তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি রাম সহায় এবং প্রধান বিচারপতি প্রকাশ সিং রাওয়াত। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই। ৭২ বছর বয়সী সুশীলা কার্কি নেপালের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার পতন হয়েছিল ওলি সরকারের।
বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সুশীলা কার্কিকে মনোনীত করেন আন্দোলনকারী ছাত্র যুবরা। যদিও প্রাথমিক অবস্থায় তাঁর কাছে এই প্রস্তাবে সম্মতি চাওয়া হলে তিনি প্রস্তাব বিবেচনার জন্য কমপক্ষে ১ হাজার স্বাক্ষর চেয়েছিলেন। পরে তাঁর পক্ষে প্রায় ২ হাজার ৫০০ স্বাক্ষর জমা পড়ে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে সম্মত হন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা কার্কির নিয়োগের কড়া সমালোচনা করেছে নেপালের মাওয়িস্ট পার্টি।
এর আগে জনপ্রিয় র্যাপার বলেন্দ্র শাহ্র নামও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সামনে এসেছিল। যদিও পরে আন্দোলনরত ছাত্র যুবরা সেই নাম থেকে সরে এসে সুশীলা কার্কির নাম প্রস্তাব করে। বলেন্দ্র শাহ, সুশীলা কার্কি ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম এসেছিল কুলমন ঘিসিং-এর।
শুক্রবার রাতে সুশীলা কার্কির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করে নেপালি সংসদের দুই কক্ষের প্রধানরা। রাষ্ট্রপতির পক্ষে থেকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও স্পিকার দেবরাজ ঘিমিরে এবং জাতীয় সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ দাহাল শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি।
নেপালের জেন জি আন্দোলকারীদের কোর কমিটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আগামী নির্বাচনের সময়সীমা বেঁধে দেবার কথা জানিয়েছেন। তাদের দাবি, আগামী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে নেপালের পরবর্তী নির্বাচন করতে হবে। সূত্র অনুসারে, ২০২৬ সালের ৫ মার্চ নেপালের পরবর্তী নির্বাচন হবার কথা।
অন্যদিকে সংসদ ভেঙে দেবার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে মাওয়িস্ট পার্টি। দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা কার্কির নিয়োগের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর পোখরেল এক বিবৃতিতে দলের কর্মী সমর্থকদের কাছে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা কার্কির শপথের পরেই আজ রাত থেকে নেপালি জারি হচ্ছে জরুরি অবস্থা। জানা গেছে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকেই জরুরি অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
৪ সেপ্টেম্বর থেকে নেপালে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (পূর্বতন টুইটার) সহ ২৬টি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। যার প্রতিবাদে সোমবার ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী কাঠমান্ডুর নিউ বাণেশ্বরে বিক্ষোভ দেখান জেন-জি প্রজন্ম। অর্থাৎ মূলত ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে যুবক-যুবতীরা এই বিক্ষোভে সামিল হন। সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে অন্যত্রও। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘর্ষে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন