

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউ ইয়র্কে ইতিহাস রচনা করেছেন ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি (Zohran Mamdani)। এই প্রথম কোনও মুসলিম এবং দক্ষিণ এশীয় মেয়র পেল নিউ ইয়র্ক। নির্বাচনী প্রচারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। যা তাঁর জেতার পথ আরও মসৃণ করে দেয়।
৩৪ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট নেতার উত্থান যেন রাজনৈতিক এক বিপ্লব। কুইন্সের রাজ্য অ্যাসেম্বলিম্যান হিসেবে প্রায় অচেনা অবস্থান থেকে তিনি রাতারাতি জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত মুখে পরিণত হন। তাঁর প্রগতিশীল বামপন্থী চিন্তাধারা তরুণ ভোটারদের মন জয় করেছে।
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানি সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে আসেন। ব্রঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্স থেকে পড়াশোনা শেষে তিনি বোডোইন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক হন। কলেজ জীবনে তিনি ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’-এর ক্যাম্পাস শাখা তৈরি করেন।
রাজনীতিতে আসার আগে তিনি কুইন্সে হাউজিং কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করেছেন। যেখানে নিম্নআয়ের মানুষদের উচ্ছেদ থেকে বাঁচাতে সহায়তা করতেন। তাঁর মা বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার এবং বাবা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি।
নিজের মুসলিম পরিচয় ও অভিবাসী শিকড় তিনি গর্বের সঙ্গে প্রচারে তুলে ধরেছেন। তিনি নিয়মিত মসজিদ পরিদর্শন করেছেন এবং উর্দু ভাষায় প্রচার ভিডিয়োও বানিয়েছেন, যেখানে শহরের জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের কথা বলেছেন।
নিউ ইয়র্কের ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার খরচ মোকাবিলাই মামদানির প্রচারের মূল প্রতিশ্রুতি ছিল। এছাড়া তিনি শহরজুড়ে সরকারি মালিকানাধীন মুদি দোকানের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, পাবলিক বাস সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা, সর্বনিম্ন মজুরি ২০৩০ সালের মধ্যে ঘণ্টায় ৩০ ডলার করা, শিশুদের যত্নের জন্য খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়নের জন্য তিনি বড় কর্পোরেট সংস্থার কর হার ৭.২৫% থেকে বাড়িয়ে ১১.৫% করার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং বছরে ১০ লক্ষ ডলারের বেশি উপার্জনকারীদের উপর অতিরিক্ত ২% কর বসানোর কথা বলেছিলেন। তাঁর এই প্রতিশ্রুতিগুলি নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
মামদানি শহরে একটি ডিপার্টমেন্ট অফ কমিউনিটি সেফটি গঠন করতে চান, যা মানসিক স্বাস্থ্য সেবাকে সম্প্রসারিত করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মানসিক সমস্যাসংক্রান্ত ৯১১ সরকারি কল-এ পুলিশের পরিবর্তে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা সাড়া দেবেন। তাঁর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী কার্টিস স্লিওয়া একে “অবাস্তব ও বিপজ্জনক” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির প্রকৃত জনপ্রিয়তার রহস্য তাঁর “সৎ এবং তরুণ ভাবমূর্তি”। আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেন হল বলেন, “রাজনীতিতে তরুণ না হলেও চলে, কিন্তু মানুষের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলার ক্ষমতা থাকতে হবে। সেটাই তাঁকে তরুণ ভোটারদের প্রিয় করেছে।”
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন