
গাজার সম্পূর্ণ দখল নিয়ে সেখানে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইজরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রক। এ খবর জানিয়েছে সংবাদসংস্থা এ পি। ইতিমধ্যেই গাজার এক তৃতীয়াংশ ইজরায়েলের দখলে। যদিও এদিনের বৈঠকে তুমুল বিতণ্ডা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইজরায়েলের সংবাদ সংস্থা কান।
বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইজরায়েলের সেনাপ্রধান আইল জামির বলেন, এই সিদ্ধান্তে আমাদের সকলকে বিপদে পড়তে হতে পারে। কারণ আমরা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা গাজা স্ট্রিপকে অনাহারে রাখতে পারি না। এই বক্তব্য বিপজ্জনক।
অন্যদিকে, সিদ্ধান্তের পক্ষে অতি-দক্ষিণপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির জানিয়েছেন, গত দুই মাসে ইজরায়েল যেমন করেছে, ঠিক তেমনভাবে গাজার জনগণকে অনাহারে রাখার জন্য সেখানে সমস্ত খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, জ্বালানি এবং অন্যান্য সাহায্য প্রবেশে বাধা দেওয়া অব্যাহত রাখা উচিত।
এ পি-র প্রতিবেদন অনুসারে ইজরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রকের বৈঠকে আজ এই পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে এবং পণবন্দীদের মুক্ত করতে ও ইজরায়েলের শর্তে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য হামাসের উপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রকের দুই আধিকারিক জানিয়েছেন, এই পরিকল্পনায় লক্ষ লক্ষ প্যালেস্তিনীয়কে দক্ষিণ গাজায় স্থানান্তরিত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আধিকারিকরা সংবাদমাধ্যমে একথা জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের সংবাদ মাধ্যম ইউএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইজরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রকের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, নতুন পরিকল্পনাটি ইজরায়েলের চূড়ান্ত সামরিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে আছে, হামাসকে পরাজিত করা এবং গাজায় পণবন্দীদের মুক্তি দেওয়া। এছাড়াও এই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে লক্ষ লক্ষ প্যালেস্তিনীয়কে দক্ষিণ গাজায় স্থানান্তরিত করা হবে। যার ফলে আরও ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দেবে বলে ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
ইজরায়েলি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পরিকল্পনায় এই উপত্যকা এবং অঞ্চল দখল করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে হামাস গোষ্ঠীর কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছানো থেকেও আটকানো যাবে। ইজরায়েল মনে করে এই পদ্ধতিতে হামাসের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করা যাবে। এছাড়াও এই পরিকল্পনায় হামাস লক্ষ্যবস্তুতে শক্তিশালী হামলাও অন্তর্ভুক্ত আছে।
জানা গেছে, গাজা জয় এবং অঞ্চল দখল করার পরিকল্পনাটি আগামী কয়েক মাস ধরে ধীরে ধীরে সম্পন্ন করা হবে এবং অসামরিক নাগরিকদের গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণে স্থানান্তরিত করা হবে। হামাস পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত অথবা সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা ছেড়ে চলে যেতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত ইজরায়েল এই দখলীকৃত অঞ্চলে নিজেদের কব্জা রাখবে।
সূত্র অনুসারে, আগামী সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের পরেই এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা শুরু হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। নিরাপত্তা মন্ত্রী জিভ এলকিন জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের ফলে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দীদের মুক্তির জন্য আলোচনার দরজা উন্মুক্ত করে দেবে।
ইজরায়েলের দাবি অনুসারে, এখনও পর্যন্ত হামাসের হাতে ২৪ জন ইজরায়েলি বন্দি হয়ে রয়েছে, যারা জীবিত থাকতেও পারেন। বাকি আরও ৩৫ জন বন্দীর নিশ্চিত মৃত্যু হয়েছে বলে ধরে নিয়েছে ইজরায়েল। গত ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল হামাস। এরপরেই প্যালেস্তাইনের ওপর আক্রমণ শুরু করে ইজরায়েল। যদিও ইজরায়েলের এই পরিকল্পনার নিন্দা করেছে বিশ্বের একাধিক দেশ। যারমধ্যে ইউরোপ এবং আরবের বেশ কয়েকটি দেশ আছে। যদিও যুদ্ধ প্রসঙ্গিত সাম্প্রতিক একাধিক সমীক্ষা জানাচ্ছে যুদ্ধের প্রতি ইজরায়েলি জনসাধারণের সমর্থন ক্রমশই কমছে এবং অনেকেই আলোচনার মাধ্যমে বন্দীদের মুক্তির কথা জানিয়েছেন।
২০২৩-এর অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত গাজায় মৃত্যু হয়েছে ৫২ হাজার প্যালেস্তিনীয়র। যাদের অধিকাংশই অসামরিক সাধারণ নাগরিক এবং মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা ও শিশু। অন্যদিকে ৭ অক্টোবর ২০২৩ হামাসের হাতে ইজরায়েলের ১২০০ নাগরিকের মৃত্যু হয়। যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন অসামরিক সাধারণ নাগরিক। ওইদিনই ২৫১ জন ইজরায়েলি নাগরিককে বন্দী করে হামাস। রাষ্ট্রসংঘের শিশু বিষয়ক পরিচালন সংস্থা ইউনিসেফের মতে, গাজার প্রায় ৯,০০০ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এবং যাদের অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন