
বন্ধ হতে চলেছে আমেরিকান শর্ট সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রিপোর্ট প্রকাশ করে গোটা আন্তর্জাতিক বাজারে শোরগোল ফেলেছিল এই সংস্থা। ব্যাপক তোলপাড় হয় ভারতের রাজনীতি। বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় গৌতম আদানিকে। সংস্থা বন্ধ করার কথা জানান খোদ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নাথান অ্যান্ডারসন।
একের পর এক কর্পোরেট সংস্থার 'দুর্নীতির পর্দাফাঁস' করেছিল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। বিভিন্ন দেশের একাধিক বড় বড় সংস্থার বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশ করে মার্কিন সংস্থাটি। সেই সংস্থার আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পিছনে কি কোনও রাজনৈতিক চক্রান্ত বা আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে? সেই সম্ভাবনা অবশ্য নাথান নিজেই খারিজ করেছেন।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের ওয়েব সাইটে তিনি লেখেন, "এই সিদ্ধান্ত আমি আমার পরিবার, বন্ধু এবং আমাদের হিন্ডেনবার্গ দলের প্রত্যেক সদস্যের সাথে আলোচনা করেই নিয়েছি। এটা তৈরি করা আমার জীবনের স্বপ্ন ছিল। তা আমি পূরণ করতে পেরেছি। আমাদের পরিকল্পনাই ছিল যে কাজ শেষ হওয়ার পর সংস্থাটি বন্ধ করব। সেটাই করছি"।
তিনি আরও লেখেন, ''যখন এই সংস্থা শুরু করি তখনও সফল হওয়া নিয়ে আমার সন্দেহ ছিল। সংস্থা শুরুর সময় আমার কাছে বিশেষ অর্থ ছিল না। আমি পড়াশোনাও করেছি সাধারণ বিদ্যালয় থেকে। আমি কোনও এমন ব্যক্তি নই যে মাত্র ৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে সমস্ত কাজ করবে। চাকরি করার সময় একজন ভালো কর্মী ছিলাম। এই সংস্থা শুরু করার পরই একাধিক মামলা হয় আমার বিরুদ্ধে। এমনকি সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছাড়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছিল। সেইদিনই যদি হেরে যেতাম তাহলে এত সাফল্য পেতাম না। নিজেকে শক্ত করে এগিয়ে গিয়েছি।''
পাশাপাশি নাথান জানান, অসাধারণ ১১ জনের দল গঠন করি। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই কাজ করতে শুরু করি। আসলে তাঁদেরকে কেবল কর্মী হিসেবে নিয়োগ করিনি। আমার সাথে তাঁদের কাজের অনেক মিল পেয়েছিলাম। সকলেই বুদ্ধিমান এবং মনোযোগী।
হিন্ডেনবার্গের প্রতিষ্ঠাতা নাথান 'ইউনিভার্সিটি অফ কানেকটিকাট' থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসায় স্নাতক হন। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা 'ফ্যাক্টসেট রিসার্চ সিস্টেমস ইনকর্পোরেটেড'-এর আর্থিক দফতরে কাজ করতে শুরু করেন। তারপর তিনি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সংস্থা গঠন করে একের পর এক সংস্থার 'কেলেঙ্কারি' বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে থাকেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। তবে ভারতীয়রা এই সংস্থার সাথে পরিচিত হয় আদানি গ্রুপ সংক্রান্ত হিন্ডেন রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর। ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’ তাদের রিপোর্টে দাবি করে, আদানি গ্রুপ দশকের পর দশক ধরে শেয়ারের ক্ষেত্রে স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতি করে আসছে। অর্থাৎ আদানি গ্রুপের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের দাম কৃত্রিম ভাবে বাড়ানো হয়েছে। এভাবেই তাদের সম্পদ ৮১৯ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। শুধু তাই নয়, কর ছাড় পাওয়া যায় এমন দেশে ‘ভুয়ো সংস্থা’ তৈরি করে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি হিন্ডেনবার্গ তাদের দ্বিতীয় রিপোর্টে দাবি করে, ২০১৭ সালে সেবিতে যোগ দেবার আগে মাধবী বুচের নামে থাকা সমস্ত শেয়ার তাঁর স্বামীর নামে করে দেওয়া হয়। রিপোর্টে দাবি করা হয় গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানির বিদেশে থাকা সংস্থায় অংশীদারি রয়েছে সেবি প্রধান মাধবী বুচ এবং তাঁর স্বামীর। আদানির এই স্টক ম্যানিপুলেশনে বুচও জড়িত। তাই আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে নিষ্ক্রিয় সেবি। যদিও এই সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে আদানি গ্রুপ। সংস্থার তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, কিছু মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর অভিযোগ আনা হয়েছে। সংস্থার সুনাম নষ্ট করতে এটি পরিকল্পিত চক্রান্ত।
শুধু আদানি গ্রুপ নয়, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ 'নিকোল' গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের রিপোর্টও প্রকাশ্যে এনেছিল। এই সংস্থাটি বৈদ্যুতিন ট্রাক প্রস্তুত করার জন্য বিখ্যাত। সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিনিয়োগকারীদের। টেসলার সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে এমন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেছিল সংস্থাটি। সমস্ত ভিডিও ভুয়ো বলে দাবি করেছিল হিন্ডেনবার্গ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন