ব্রিটেন কখনই সেইসব অতি দক্ষিণপন্থীদের সামনে ‘আত্মসমর্পণ’ ("Never Surrender" করবে না, যারা ব্রিটেনের পতাকা ব্যবহার করে হিংসা সৃষ্টি করছে এবং মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করছে। শনিবার লন্ডনে পুলিশ কর্মীদের ওপর আক্রমণ এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি ভীতি প্রদর্শনের নিন্দা করে একথা জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমের (Keir Starmer)।
দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে রবিবার স্টারমের জানিয়েছেন, সেন্ট জর্জের পতাকা "আমাদের বৈচিত্র্যময় দেশের প্রতিনিধিত্ব করে" এবং তিনি কোনোভাবেই ব্রিটেনের রাস্তায় তাদের পটভূমি বা তাদের গায়ের রঙের কারণে ভয় দেখানো সহ্য করবেন না।
শনিবারের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি দ্য গার্ডিয়ান-কে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সকলেরই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকার আছে। কিন্তু বিক্ষোভের নামে হিংসা এবং ভয় দেখানো বরদাস্ত করা হবেনা।
শনিবার প্রায় এক লাখের কাছাকাছি মানুষ মধ্য লন্ডনে এক মিছিল করে। উগ্র দক্ষিণপন্থী নেতা টমি রবিনসনের নেতৃত্বে "ইউনাইট দ্য কিংডম" সমাবেশের আয়োজকরা এই সমাবেশকে বাকস্বাধীনতার প্রতিবাদ হিসেবে অভিহিত করেছেন। দক্ষিণপন্থীদের সমর্থনে সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটেনে এটিই সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
সমাবেশের আয়োজকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন টমি রবিনসন (Tommy Robinson) এবং এলন মাস্ক (Elon Musk)। নিজেদের বক্তব্যে তাঁরা দাবি করেন, “অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন” এবং ইউরোপীয় জনগণের ব্রিটেনে ঢুকে পড়ার কারণে ব্রিটেন ধ্বংস হচ্ছে।
সভায় হোয়াইটহলে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে এলন মাস্ক বলেন, "ব্রিটিশ হওয়ার মধ্যে একটা সুন্দর ব্যাপার আছে এবং আমি এখানে যা ঘটতে দেখছি তা হল ব্রিটেনের ধ্বংস। প্রাথমিকভাবে একে ধীরগতির ক্ষয় বলে মনে হলেও, তা আসলে ব্যাপক অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসনের মাধ্যমে ব্রিটেনের দ্রুত ক্রমবর্ধমান ক্ষয়।"
সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে মাস্ক আরও বলেন, আগামী দিনে আরও হিংসা আসছে। হয় তোমাকে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে অথবা শেষ হয়ে যেতে হবে।
গতকালের সমাবেশ প্রসঙ্গে লেবার সাংসদ স্টেলা ক্রিসি এক এক্স বার্তায় (পূর্বতন ট্যুইটার) পিটার কাইলের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “বাকস্বাধীনতার বিষয়ে আমি পিটার কাইলের সাথে একমত নই - আমরা জনগণের প্রতিবাদ করার অধিকার রক্ষা করতে পারি এবং এখনও মনে করি গতকালের এই অনুষ্ঠানের পিছনের আসল উদ্দেশ্য স্বাধীনতা নয়, বরং ভয় সৃষ্টি করা। তাদের অবশ্যই মিছিল করতে দিতে হবে এবং পাশাপাশি আমরা কারা তা তাদের অবশ্যই তাদের মনে করিয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য।” গতকালের সমাবেশ প্রসঙ্গে ব্রিটেনের বিজনেস সেক্রেটারি পিটার কাইল (Peter Kyle) জানিয়েছিলেন, এই সমাবেশ আসলে প্রমাণ করে, আমরা এমন এক দেশে বাস করি যেখানে বাকস্বাধীনতা, মুক্ত মেলামেশা জীবন্ত এবং ভালো।
লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা এড ডেভি জানিয়েছেন, রক্ষণশীলদেরও এই হিংস্র বক্তব্যের নিন্দা জানানো উচিত। তিনি বলেন, "এলন মাস্ক গতকাল আমাদের রাস্তায় প্রকাশ্যে হিংসার ডাক দিয়েছেন। আমি আশা করি সব দলের রাজনীতিবিদরা তাঁর এই গভীর বিপজ্জনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের নিন্দা জানাতে সহমত হবেন। আমাদের গণতন্ত্রকে দুর্বল করার এই স্পষ্ট প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ব্রিটেনকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।"
পুলিশের সূত্র অনুসারে, গতকালের সমাবেশে কমপক্ষে ১ লক্ষ ১০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ মানুষ ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। গতকালের সমাবেশের হিংসা থেকে কমপক্ষে ২৬ জন পুলিশ অফিসার আহত হয়েছে। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে কমপক্ষে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠের বয়স ১৯ এবং সবথেকে বেশি বয়সী যে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর বয়স ৫৮।
উল্লেখযোগ্যভাবে ১৩ সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভের আগেই গত ১১ সেপ্টেম্বর এক এক্স বার্তায় কিয়ের স্টারমের জানিয়েছিলেন, "যারা আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহার করবে তাদের অবশ্যই কঠোরতম পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমরা রেকর্ড সংখ্যক নিয়োগকর্তাকে অভিবাসী কর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি কারণ তারা নিয়ম ভঙ্গ করেছে এবং কর্মীদের শোষণ করেছে। আমার পরিবর্তনের পরিকল্পনা হল কৌশল নয়, পদক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের সীমান্ত সুরক্ষিত করা।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন