

জুলাই আন্দোলনের মুখ এবং ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে ওসমান হাদির মৃত্যু ঘটে। আগামীকাল শনিবার তাঁর মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। মূলত আওয়ামী লীগ এবং ভারতবিরোধী বক্তব্যের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার শিরোনামে ছিলেন ওসমান হাদি।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর রাতভর বাংলাদেশের প্রথম সারির দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ভাঙচুর চলেছে ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবর রহমানের বাড়ি, ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনেও। এছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হিংসার খবর পাওয়া গেছে।
সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণের ঘটনা শুনে সেখানে গিয়ে হামলাকারীদের আক্রমণের মুখে পড়েন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর। বৃহস্পতিবার ডেইলি স্টার পত্রিকা দপ্তরের সামনে হেনস্থা করা হয় সম্পাদক পরিষদের সভাপতি কবীরকে। খুলনায় এক সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করেছে উত্তেজিত জনতা।
অন্যদিকে সংবাদমাধ্যমের দপ্তরে হামলার কারণে আজ শুক্রবার প্রথম আলো এবং দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রকাশ সম্ভব হয়নি। এই দুই সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণও প্রায় বন্ধ। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে আচমকাই কয়েকশ বিক্ষুব্ধ এই দুই পত্রিকার দপ্তরে হামলা চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের অভিযোগ, সমস্ত ঘটনার সময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকেছে এবং হামলাকারীদের সরানোর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, বৃহস্পতিবার রাতে ওসমান হাদির মৃত্যু সংবাদ আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। ওসমান হাদির হত্যার বিচার চেয়ে রাতেই শাহবাগে জড়ো হতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। গত সপ্তাহের শুক্রবার ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্রথমে ডাকা মেডিকেল কলেজ, পরে এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং তিনদিন পর সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের নাগরিকদের ধৈর্য ধরার আবেদন জানিয়েছেন। গতকাল রাতে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, এই শোকের মুহূর্তে আসুন আমরা শহিদ ওসমান হাদির আদর্শ ও ত্যাগকে শক্তিতে পরিণত করি। অপপ্রচার ও গুজবে কান না দিয়ে যে কোনও হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এই নৃশংস হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ইউনুস বলেন, ভয় দেখিয়ে, সন্ত্রাস অথবা রক্তপাতের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি কেউ আটকাতে পারবে না।
২০২৪-এর জুলাই মাসে ছাত্র বিক্ষোভের জেরে প্রবল অস্থিরতার কারণে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার পালন করছেন মহম্মদ ইউনুস। আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা।
সংবাদমাধ্যম রয়টার্স-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সপ্তাহের শুরুতে ভারত বিরোধী নতুন বিক্ষোভের পর এই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, এবং শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। বুধবার ‘জুলাই ঐক্য’ ব্যানারে শত শত বিক্ষোভকারী ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দিকে মিছিল করে ভারতবিরোধী স্লোগান দেয় এবং একই সাথে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেবার দাবি জানায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধারা তাঁকে লড়াকু যোদ্ধা মনে করতেন। গত ১২ ডিসেম্বর তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ওই সময় তিনি ঢাকার পুরানো পল্টন এলাকায় রিকশা করে যাচ্ছিলেন। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় চোদ্দজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল গভীর রাতে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “দেশের সাধারণ জনগণকে যেকোনো ধরনের সহিংসতা পরিহার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ওসমান হাদী তার শত্রুর সাথেও আমৃত্যু ইনসাফ চেয়েছেন, বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই করতে চেয়েছেন।
যিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিজের জীবনটা পর্যন্ত বিলিয়ে দিয়েছেন, তাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনভাবেই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন না হয় সেদিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখবার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
যারা এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখুন। কোনভাবেই দেশকে অকার্যকর হতে দেয়া যাবে না।”
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন