ইন্দোনেশিয়া জুড়ে চলছে তুমুল সরকার বিরোধী বিক্ষোভ। গত দু’সপ্তাহ ধরে সরকারের বিরুদ্ধে চলা এই বিক্ষোভ বুধবারে আরও বড়ো আকার নিয়েছে। দেশের প্রায় সব প্রধান শহরে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বুধবার রাজধানী জাকার্তার রাস্তায় মহিলারা গোলাপী পোশাক পরে ঝাঁটা হাতে বিক্ষোভে শামিল হন।
গত কয়েকদিনের বিক্ষোভে এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শুধুমাত্র জাকার্তা শহরেই ১২০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে আহত হয়েছেন ৫০০-র বেশি মানুষ। এখনও পর্যন্ত ২০ জনের বেশি নিখোঁজ হয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ান প্রশাসনের সূত্র অনুসারে দেশের ৩৮টি প্রদেশের মধ্যে ৩২টিতেই বিক্ষোভ চলছে এবং একাধিক স্থানীয় সংসদ ভবনে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকদের বাড়ির ঠিকানা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে এবং সেইসব বাড়িতে লুটপাট ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে।
ইন্দোনেশিয়ান ওমেন’স অ্যালায়েন্স (IWA) নামক মহিলাদের মঞ্চের সদস্যরা বুধবার মিছিল করে সংসদ ভবনের সামনে যান। কম মজুরি, অতিরিক্ত করের বোঝা এবং সাংসদদের বেতন বাড়ানোর প্রতিবাদে গত দু’সপ্তাহ ধরে এই বিক্ষোভ চলছে। গত ২৮ আগস্ট জাকার্তায় পুলিশের গাড়িতে এক মোটরবাইক চালকের মৃত্যুর পর থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হয়।
বুধবার জাকার্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এপিআই নেতারা রাষ্ট্রপতিকে নাগরিকদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী ও পুলিশের ব্যবহার বন্ধ করার এবং নিরাপত্তা অভিযান থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রপতি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাজাফ্রি সাজামসোয়েদিন এবং জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার আগুস সুবিয়ান্তোর কাছে পুলিশের সাথে মোতায়েন করা সৈন্যদের প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে জাতীয় পুলিশ প্রধান লিস্টিও সিগিটের পদত্যাগ এবং অভিযোগ ছাড়াই আটক সব বন্দীর মুক্তির দাবি জানায়।
সাধারণ মানুষের লাগাতার বিক্ষোভের ফলে কিছুটা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রাবোও সুবিয়ান্তো। সংসদ সদস্যদের জন্য সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনা থেকে ইতিমধ্যেই তিনি সরে আসার কথা ঘোষণা করেছেন। যদিও এর পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক দলের সদস্যদের সরকারি ভবন এবং বাড়িঘর লুটপাট বা আগুন লাগানোর পর পর বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশকে নির্দেশ দেন।
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং কর্তৃপক্ষের মতে, মঙ্গলবারও বান্দুং শহরের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে এবং এর ফলে অস্থিরতা বাড়ে।
গত সপ্তাহের সোমবার থেকে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রধানত সংসদ সদস্যদের গৃহ ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ মানুষ।
বিক্ষোভগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছাত্র, তরুণ ইন্দোনেশিয়ান, মহিলা সংগঠন এবং শ্রমিক সংগঠন যুক্ত। মূলত সরকারী অর্থনীতি এবং ইন্দোনেশিয়ার চরম আয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
বিক্ষোভের জেরে রাষ্ট্রপতি তাঁর প্রস্তাবিত চিন সফর বাতিল করলেও পরবর্তী সময় সিদ্ধান্ত বদল করে তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন এবং বুধবারের সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নেন।
গত মাসে প্রাবোও সংসদে ২০২৬ সালের জন্য ২৩৪ বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করেন যেখানে আঞ্চলিক তহবিলকে এক চতুর্থাংশ কমিয়ে ৪০ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়, যা এক দশকে সর্বনিম্ন এবং দ্বিতীয় বছরের পতন। এই কাটছাঁটের ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই ব্যবধান পূরণ করতে ভূমি ও সম্পত্তি কর বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়াও বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে ৩৭% বৃদ্ধি করা হয়।
বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া জুড়ে লক্ষ লক্ষ তরুণ বেকার রয়েছে এবং দেশের অধিকাংশ মানুষই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি প্রাবোও সুবিয়ান্তোর সরকারি বাজেট কমানোয় দ্রুত মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। সরকারের এই ধরণের কঠোর পদক্ষেপের ফলে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ প্রতিকার চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন