
* গুজরাটে আম্বানীদের পশু পুনর্বাসন কেন্দ্র ভান্তারা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পশুপ্রেমী সংগঠন থেকে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ।
* নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টিকে "ষড়যন্ত্র" বলে জানিয়েছে ভান্তারা।
* গত ৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই চিড়িয়াখানা উদ্বোধন করেছিলেন।
ভারতের গুজরাটে অবস্থিত ভান্তারা (আনুষ্ঠানিক নাম Greens Zoological Rescue and Rehabilitation Center) পশু পুনর্বাসন কেন্দ্র নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার একাধিক পরিবেশ ও প্রাণী অধিকার সংগঠন এই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী আমদানি ও ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে CITES (Convention on International Trade in Endangered Species of Wild Fauna and Flora)-এর নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০টি পরিবেশবাদী সংগঠন নিয়ে গঠিত একটি সংযুক্ত প্ল্যাটফর্ম, Wildlife Animal Protection Forum of South Africa (WAPFSA), সম্প্রতি সে দেশের পরিবেশমন্ত্রী ডিওন জর্জ-কে লেখা এক চিঠিতে ভারতের ভান্তারা কেন্দ্রে দক্ষিণ আফ্রিকার বন্যপ্রাণী রপ্তানির বিষয়টি তদন্ত করার জন্য দাবি জানায়। গত ১৯ মার্চ এই বিষয়ে সংগঠনের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে।
WAPFSA-র মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে যেভাবে চিতা, সিংহ, বাঘ এবং চিতাবাঘ পাঠানো হয়েছে তা CITES আইনের পরিপন্থী। চিঠিতে দাবি করা হয় যে, প্রাণীদের রপ্তানির সময় CITES সার্টিফিকেট এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
www.aol.co.uk-তে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রপ্তানিগুলি “conservation”-এর নামে হলেও, বাস্তবে এটি “commercial breeding” অর্থাৎ বাণিজ্যিক প্রজননের উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে। এমনকি, ভান্তারা পুনর্বাসন কেন্দ্রের উচ্চ তাপমাত্রা ও শুষ্ক জলবায়ু দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক প্রাণীর জন্য অনুপযুক্ত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে জেনেভাতে অনুষ্ঠিত CITES-এর Standing Committee মিটিংয়ে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে বন্যপ্রাণী আদানপ্রদান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ভারতের “non-compliance” বা নিয়মভঙ্গের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়।
WAPFSA-এর চিঠিতে বলা হয়েছে, “এই প্রাণীগুলি কি সত্যিই উদ্ধার করা হয়েছিল, নাকি এদের বাণিজ্যিক প্রজননের জন্য বন্দী অবস্থায় ব্যবহার করা হচ্ছে—সেই প্রশ্নের স্বচ্ছ উত্তর পাওয়া যায়নি।”
একাধিক অভিযোগ উঠলেও সমস্ত কিছু ভিত্তিহীন বলেই দাবি করেছে ভান্তারা। তাদের দাবি, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা সমস্ত প্রাণী দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ও প্রাদেশিক নিয়ম মেনেই হয়েছে। এই অভিযোগের পিছনে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে। কোনরকম বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রজনন করা হচ্ছে না।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভান্তারার মতো বৃহৎ পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলি একদিকে যেমন প্রাণীদের রক্ষা করতে পারে, তেমনি আন্তর্জাতিক আইন না মানলে এটি বন্যপ্রাণী পাচারের একটি আড়াল হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। তাই স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক নজরদারির প্রয়োজন।
ভান্তারার ২০২৩-২৪ সালের বার্ষিক রিপোর্ট অনুসারে, চিড়িয়াখানাটি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৫৬টি চিতা, ৫২টি ক্যারাকাল, ৬টি জাগুয়ার, ১৯টি চিতাবাঘ, ৯০টি সিংহ, ২০টি আফ্রিকান বন্য কুকুর এবং আরও অনেক প্রাণী পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিড়িয়াখানাটি উদ্বোধন করেছিলেন এবং প্রাণীদের সাথে তার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। তারপর থেকেই চর্চায় রয়েছে আম্বানিদের চিড়িয়াখানা 'ভান্তারা'।
ভান্তারা পশু পুনর্বাসন কেন্দ্রটি গুজরাটের জামনগরে অবস্থিত, যা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের অধীন। সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এই কেন্দ্রে ৪৩ প্রজাতির ২,০০০ এরও বেশি প্রাণী আছে, যা উন্নত পশুচিকিৎসা সরঞ্জাম, প্রাকৃতিক আবাসস্থলের অনুকরণকারী প্রশস্ত এবং ২,১০০ জনেরও বেশি কর্মীর একটি বিশেষজ্ঞ দল এই প্রাণীদের পরিচর্যার কাজে যুক্ত। ভান্তারা কেবল প্রাণী কল্যাণকেই উৎসাহিত করে না বরং সংরক্ষণ প্রচেষ্টা এবং জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব সম্পর্কে দর্শনার্থীদের শিক্ষিত করার লক্ষ্যও রাখে। এটি প্রায় ৩,০০০ একর জমির উপর বিস্তৃত। সরকারি নথি অনুযায়ী, এই কেন্দ্রে বিভিন্ন দেশ থেকে দুরবস্থায় পড়া বা অবৈধভাবে পাচার হওয়া প্রাণীদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও সুরক্ষা দেওয়া হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন