M F Hussain: দু'দশক পর ব্যাঙ্কের লকার থেকে মুক্তি পাচ্ছে মকবুল ফিদা হুসেনের ২৫টি ছবি, নিলাম কবে?

People's Reporter: আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার সুপরিচিত এই শিল্পী, দক্ষিণপন্থীদের রোষে পড়ে ২০০৬ সালের শেষের দিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তৎকালীন সরকারও এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়।
মকবুল ফিদা হুসেন
মকবুল ফিদা হুসেন গ্রাফিক্স আকাশ
Published on
Summary

• আইনি জটিলতায় দীর্ঘ দু'দশকের বেশি সময় ছবিগুলো আটকে ছিল ব্যাঙ্কের লকারে;

• Our Planet Called Earth - OPEC সিরিজের ২৫টি ছবি এবার দিনের আলো দেখতে চলেছে।

• আগামী ১২ জুন মুম্বাইতে এই ছবিগুলির নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

• দক্ষিণপন্থীদের রোষে পড়ে ২০০৬ সালের শেষের দিকে ভারত ছাড়তে বাধ্য হন এম এফ হুসেন।

দীর্ঘ সময় ব্যাঙ্কের লকারে আটক থাকার পর এবার দিনের আলো দেখতে চলেছে মকবুল ফিদা হুসেনের (M F Hussain) ২৫টি তৈলচিত্র। যে ছবি এর আগে কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। এক আইনি জটিলতায় পড়ে দীর্ঘসময় ওই ২৫টি ছবি আটক ছিল এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের লকারে। আপাতত বিবাদ মেটায় আগামী ১২ জুন মুম্বাইতে নিলামে উঠতে চলেছে ওই ছবিগুলি। প্রসঙ্গত, চিত্রশিল্পী এম এফ হুসেনের মৃত্যু হয়েছে ২০১১ সালে।

কী কারণে দু’দশক ধরে এই ছবিগুলো ব্যাঙ্কের লকারে আটক ছিল?

আইনি জটিলতায় পড়ে দু’দশকের বেশি সময় এই ২৫টি ছবি আটকে ছিল এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের লকারে। এই ২৫টি ছবি যে সিরিজের তার নাম ছিল ‘আওয়ার প্ল্যানেট কলড আর্থ’ (Our Planet Called Earth - OPEC)। মকবুল ফিদা হুসেনকে এই সিরিজে মোট ১০০ টি ছবি আঁকার বরাত দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী স্বরূপ শ্রীবাস্তব। যদিও মাত্র ২৫ টি ছবিই আঁকা শেষ হয়েছিল। এর পরেই ঋণখেলাপী হয়ে পড়েন শ্রীবাস্তব। যার জেরে এই ২৫টি ছবিও ব্যাঙ্কের ঘরে আটক হয়।

জানা গেছে, এই সিরিজের প্রথম ছবিটি একটি বড়ো ক্যানভাসে হুসেন এঁকেছিলেন মুম্বাইয়ের পুন্ডোলে আর্ট গ্যালারিতে। একথা জানিয়েছেন ওই গ্যালারির কর্ণধার দাবিবা পুন্ডোলে। পরবর্তী সময়ে দুবাইতে এক বন্ধুর বাড়িতে তিনি বাকি ছবিগুলি আঁকেন। প্রাথমিকভাবে ১০০টি ছবির দাম নির্ধারিত হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা।

২০০৪ সালেই ওপেক সিরিজের ২৫টি ছবি আঁকা শেষ করেছিলেন হুসেন। এরপর এই ছবিগুলি তিনি তুলে দেন স্বরূপ শ্রীবাস্তবের হাতে। যদিও পরবর্তী সময়ে  আর্থিক দুর্নীতির ঘটনায় শ্রীবাস্তবের জড়িয়ে পড়ার ফলে এই সিরিজের কাজ বন্ধ করে দেন হুসেন।

২০০৬ সালে, সিবিআই স্বরূপ শ্রীবাস্তবের বিরুদ্ধে ন্যাফেড থেকে নেওয়া ২৩৫ কোটি টাকার ঋণখেলাপীর তদন্ত শুরু করে। জানা যায় লৌহ আকরিক আমদানির কথা বলে এই ঋণ নেওয়া হলেও তা ব্যবহার করা হয় রিয়েল এস্টেট এবং ব্যক্তিগত কাজে। সেই টাকা দিয়েই এই ২৫টি ছবিও কেনা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এরপর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে, একটি ট্রাইব্যুনাল বকেয়া পাওনা আদায়ের জন্য স্বরূপ গ্রুপের সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়। যার মধ্যে হুসেনের এই ২৫টি ছবিও ছিল। তথ্য অনুসারে, বর্তমানে সুদ সহ এই ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

কবে হতে চলেছে হুসেনের ছবির নিলাম?

আদালতের নির্দেশ মেনে, চলতি বছরের শুরুতে পুন্ডোলে আর্ট গ্যালারি এই শিল্পকর্মগুলি মূল্যায়ন করে এবং এর মূল্য ২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপরেই এই ছবিগুলি নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

“এমএফ হোসেন: এক্সএক্স সেঞ্চুরির একজন শিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গি” (MF Husain: An Artist’s Vision of the XX Century’ শীর্ষক নিলামটি মুম্বাইয়ের হ্যামিল্টন হাউসে পুন্ডোলের নিলাম ঘর দ্বারা আয়োজিত হবে। ৮ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত চিত্রকর্মগুলি প্রদর্শনী জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

২০১১ সালে মৃত্যু হলেও অতি সম্প্রতি তাঁর একটি ছবি বিক্রি হয়েছে ১১৮ কোটি টাকায়। চলতি বছরের ১৯ মার্চ নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টির নিলামে তাঁর ছবির দাম ওঠে ১১৮ কোটি টাকা। যা সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ভারতীয়র শিল্পকর্মের সবথেকে বেশি দাম।

কেন দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন মকবুল ফিদা হুসেন?

১৯১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এম এফ হুসেন এবং লন্ডনে তাঁর মৃত্যু হয় ৯ জুন ২০১১। ২০০৬-এ ভারত ছেড়ে চলে যাবার পর তিনি আর দেশে ফেরেননি। ২০১১-তে নির্বাসিত অবস্থাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার সুপরিচিত এই শিল্পী, দক্ষিণপন্থীদের রোষে পড়ে ২০০৬ সালের শেষের দিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তৎকালীন সরকারও এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়।

মকবুল ফিদা হুসেনের মৃত্যুর পর তাঁর মৃত্যুকে জাতীয় ক্ষতি বলার তীব্র সমালোচনা করে প্রবীণ থিয়েটার ব্যক্তিত্ব এম. কে. রায়না বলেন, “রাজনীতি তার নোংরা খেলা খেলতে সফল হয়েছে। এইধরণের বক্তব্যে ভণ্ডামি লুকিয়ে আছে। এখন কেউ তাঁর বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলতে চায় না কারণ তিনি তাদের তোয়াক্কা করেননি। তিনি বন্দী হয়ে দেশে ফিরে আসতে অস্বীকার করেছিলেন। যারা তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল তারাই আজ তাঁর মৃত্যুকে জাতীয় ক্ষতি বলছে। যখন আপনি আপনার দেশের সেরা শিল্পীকে দেশ ছেড়ে অন্যত্র নির্বাসনে থাকতে বাধ্য করেছিলেন, তখন কি এটি একটি জাতীয় ক্ষতি ছিল না?

Keywords: M F Husain, M F Husain paintings, M F Husain auction, M F Husain unseen artworks, unreleased M F Husain paintings

মকবুল ফিদা হুসেন
Salman Rushdie: সলমন রুশদির হামলাকারীকে ২৫ বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি শোনালো আদালত
মকবুল ফিদা হুসেন
Ruskin Bond: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিবাদ! জন্মদিন উদযাপন করবেন না রাস্কিন বন্ড

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in