যে গান নিষিদ্ধ, সেই গান-ই অস্ত্র - 'আমার সোনার বাংলা' গেয়েই মঙ্গলবার রাজ্যজুড়ে রবি-অবমাননার প্রতিবাদ

People's Reporter: বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বাংলা ভাষা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ বহু প্রথিতযশা বাঙালি মনীষীদের ধারাবাহিকভাবে অবমাননা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকীগ্রাফিক্স আকাশ
Published on
Summary

* রবীন্দ্রভাবনার ওপর মৌলবাদী আক্রমণের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।

* রাজ্যের বিশিষ্টজনেরা মঙ্গলবার এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন।

* আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত আসামে পরিবেশন করা কিছুতেই মেনে নেওয়া যাবে না।

‘যে গান নিষিদ্ধ, সেই গান-ই অস্ত্র হোক।’ এই ভাষাতেই মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ‘আমার সোনার বাঙলা’ গেয়ে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদে শামিল হবার আহ্বান জানালেন বিশিষ্টজনেরা। এই কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে শামিল হবার আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রবীন্দ্রভাবনার ওপর মৌলবাদী আক্রমণের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।

শনিবার রাজ্যের বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে এক যৌথ আবেদনে বলা হয়েছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বাংলা ভাষা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ বহু প্রথিতযশা বাঙালি মনীষীদের ধারাবাহিকভাবে অবমাননা করে চলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব, এমনকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও।

ওই আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে বঙ্গভঙ্গ-র প্রতিবাদে যে সভা হয়, সেই উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছিলেন 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি'। এই গান পরিবেশন করাকে সম্প্রতি রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ রূপে চিহ্নিত করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। লজ্জার কথা এই যে,পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন বিজেপি নেতা বলেছেন, এই রাজ্যেও তাঁরা ক্ষমতায় এলে এই গানটিকে নিষিদ্ধ করে দেবেন।

বিশিষ্টজনেরা তাঁদের আবেদনে বলেছেন, আমরা দেখেছি, বাংলা ভাষায় কথা বলার 'অপরাধে' বেশ কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যে বহু বাঙালিকে হেনস্থা করা হয়েছে, এমনকি  বলপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এই ধরনের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, আমাদের দেশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী সকল বাংলাভাষী ও বাংলাপ্রেমী মানুষের প্রতি আহ্বান - এই প্রতিবাদে আপনারা এগিয়ে আসুন। স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্য বহন করছে যে গান, আসুন আমরা শপথ নিই তার অমর্যাদা হতে দেব না। আগামী ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার সকাল ও সন্ধ্যায় জেলায় জেলায় ধ্বনিত হোক এই গান।

আগামীকাল ৪ নভেম্বর রাজ্যের সর্বত্র দুপুর ২টোয় এবং সন্ধ্যা ৭টায় একসঙ্গে ‘আমার সোনার বাংলা...’ গান গেয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে। এই কর্মসূচিতে শামিল হবেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও।

রবীন্দ্রচেতনার বিরুদ্ধে এই সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী হামলার প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে গান গেয়েই প্রতিবাদের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ছাত্র সংগঠন এসএফআই, যুবসংগঠন ডিওয়াইএফআই, শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ, সাংস্কৃতিক সংগঠন আইপিটিএ ইত্যাদি বিভিন্ন গণসংগঠন। 

এই আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন পবিত্র সরকার, অনিতা অগ্নিহোত্রী, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, ভগীরথ মিশ্র, অলক রায়চৌধুরী, অশোক মুখোপাধ্যায়, রাজা সেন, প্রমিতা মল্লিক, ঊর্মিমালা বসু, সব্যসাচী চক্রবর্তী, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজশ্রী ভট্টাচার্য, অগ্নিভ বন্দোপাধ্যায়, দেবজ্যোতি মিশ্র, কল্যাণ সেন বরাট, মালিনী ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা।

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার আসামের শ্রীভূমি জেলায় কংগ্রেস কার্যালয়ে সেবাদলের অনুষ্ঠানে বিধুভূষণ দাস নামের এক প্রবীণ কংগ্রেস কর্মী রবি ঠাকুরের লেখা 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটি গান। এই গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতও। ওই সভায় 'বন্দেমাতরম' এবং 'জাতীয় সঙ্গীত'ও গাওয়া হয়। কিন্তু বিজেপির পক্ষ থেকে সমাজমাধ্যমে কেবল 'আমার সোনার বাংলা' গান গাওয়ার ভিডিওটি ভাইরাল করা হয় এবং কংগ্রেসকে ‘বাংলাদেশের মোহে আচ্ছন্ন’ বলে আক্রমণ করা হয়।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, 'শ্রীভূমি জেলায় কংগ্রেসের এক সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত আসামে পরিবেশন করা কিছুতেই মেনে নেওয়া যাবে না। সেই কারণেই আসামের কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করতে আসাম পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর হবে, গ্রেফতার করা হবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।

ছবি প্রতীকী
আসামে কবিগুরুর 'আমার সোনার বাংলা' গাওয়ায় 'রাষ্ট্রদ্রোহ' মামলা! হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সমালোচনায় কংগ্রেস
ছবি প্রতীকী
Assam: বিধানসভায় আপত্তিকর বক্তব্য - হিমন্ত বিশ্বশর্মার মন্তব্য 'সাম্প্রদায়িক বিষ' - মত কপিল সিব্বলের

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in