

হাওড়ার বালিতে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ ও সমাজসংস্কারক অক্ষয় কুমার দত্তের শতাব্দী প্রাচীন হেরিটেজ বাড়ি ভাঙার চেষ্টা ঘিরে তীব্র ক্ষোভ ছড়াল স্থানীয়দের মধ্যে। সোমবার সকালে ওই ঐতিহ্যবাহী সম্পত্তি ভাঙতে নামে এক বেসরকারি নির্মাণ সংস্থা। অভিযোগ, জেসিবি মেশিন দিয়ে বাড়ির মূল কাঠামো ভাঙা শুরু হয়ে গিয়েছিল। খবর পৌঁছাতেই বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি (বিএসপিএস), বিদ্যাসাগর ফাউন্ডেশন এবং অক্ষয় দত্ত মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সদস্যরা স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে নিয়ে ভাঙচুরের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। বিক্ষোভের মুখে শেষে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মেশিন সরিয়ে দেয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই বাড়িকে ইতিমধ্যেই বালি পৌরসভা ২০০৬ সালে হেরিটেজ সম্পত্তি ঘোষণা করেছিল। বাড়ির গায়ে এখনও সেই ঘোষণার বোর্ড ঝুলছে। তবু প্রশাসনের উদাসীনতায় কীভাবে একটি বেসরকারি সংস্থা সম্পত্তির উপরে জেসিবি চালাতে পারল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, এ ধরনের পদক্ষেপ কেবল বেআইনিই নয়, বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে অবমাননা করার সামিল।
ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার 'শোভনোদ্যান'-এর বাইরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সেই সভায় বক্তব্য রাখেন বিএসপিএস-এর সাধারণ সম্পাদক অনুপ সরকার, গবেষক অর্ণব চ্যাটার্জি, বিজ্ঞান আন্দোলনের কর্মী বিশ্বজিৎ মিত্র-সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি। অক্ষয় দত্ত ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক শঙ্কর মৈত্র সাফ জানিয়ে দেন—"অক্ষয় কুমার দত্তের হেরিটেজ সম্পত্তি কোনও অবস্থাতেই ধ্বংস হতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে দীর্ঘ আন্দোলন চলবে।"
বিশ্বজিৎ মিত্রর বক্তব্যে উঠে আসে, এটি কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, বরং বাংলার ঐতিহ্য ও নবজাগরণের স্মৃতিকে রক্ষা করার লড়াই। অনুপ সরকারের কথায়, বিদ্যাসাগরের সমসাময়িক এই চিন্তাবিদের অবদান বাংলার সমাজ সংস্কারের ইতিহাসে অমূল্য। তাঁর স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা মানে গোটা বাংলার ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা।
প্রতিবাদীদের দাবি, সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ করে এই বাড়ি সংরক্ষণ ও সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, অক্ষয় দত্তের স্মৃতিকে অমর রাখতে ‘অক্ষয় স্মৃতি পাঠাগার ও সংগ্রহশালা’ গড়ে তোলারও জোরালো দাবি ওঠে। তাঁদের মতে, এটি ভবিষ্যতে সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের গবেষণার ক্ষেত্রে এক মূল্যবান কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে নবজাগরণের ভাবনা পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে।
এর আগে অক্ষয় কুমার দত্তের ২০৬তম জন্মবার্ষিকীতেও 'শোভনোদ্যান' রক্ষার দাবিতে বালিতে পদযাত্রা হয়েছিল। এদিনের সভায় শতাধিক মানুষ যোগ দিয়ে ফের একবার স্পষ্ট করে দিলেন—ঐতিহ্যের এই বাড়ি রক্ষার লড়াই শেষ হয়নি, বরং আরও তীব্র হবে।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন