চলে গেলেন ‘আংরেজো কা জমানে কা জেলার’। চলে গেলেন শোলে ছায়াছবির জেলার আসরানী। হিন্দি চলচ্চিত্রে কালজয়ী হিসেবে পরিচিত শোলে ছবির যে সংলাপ শুনলেই মনে পড়ে যায় তাঁর কথা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন, এই চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে তিনি হিটলারের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সোমবার শেষ হল তাঁর পথচলা। সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ ৮৪ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন আসরানী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
আসরানীর পুরো নাম গোবর্ধন আসরানী হলেও কবেই তাঁর নাম থেকে হারিয়ে গেছিল ‘গোবর্ধন’। ১৯৪১ সালের ১ জানুয়ারি তাঁর জন্ম জয়পুরে। সিন্ধি পরিবারের কার্পেট ব্যবসায় কোনোদিনই মন ছিলনা তাঁর। সেন্ট জেভিয়ারস এবং রাজস্থান কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করার পর তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও, জয়পুরে ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে যোগ দেন পুনে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটে।
‘হারে কাঁচ কি চুড়িয়া’ ছবি দিয়ে ১৯৬৭ সালে তাঁর বলিউডে আত্মপ্রকাশ। এই সময়েই তিনি একাধিক গুজরাটি ছবিতেও অভিনয় করেন। হৃষীকেশ মুখার্জি ১৯৬৯ সালে তাঁকে প্রথম সুযোগ দেন সত্যকাম ছবিতে। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনি প্রায় ৩৫০-র বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। মূলত পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেও তাঁর অভিনয় প্রতিভায় সব চরিত্রকেই নতুন নতুন রূপ দিতেন। পরবর্তী সময়ে ‘কমেডিয়ান’ হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ১৯৭৬-এর শোলে চলচ্চিত্রে তাঁর জেলার-এর চরিত্রে অভিনয় আজও সমানভাবে জনপ্রিয়।
তাঁর অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে অভিমান, নমক হারাম, চোর মচায়ে শোর, ছোটি সি বাত, গুড্ডি, বালিকা বধূ, এক দুজে কে লিয়ে, বাবুর্চি, ঘর পরিবার, চুপকে চুপকে, অনুরোধ, হীরালাল পান্নালাল, বাগবান, চুপ চুপ কে, গরম মশালা উল্লেখযোগ্য।
খ্যাতনামা অভিনেতা রাজেশ খান্নার সঙ্গে তিনি কমপক্ষে ২৫টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন হৃষীকেশ মুখার্জি, গুলজার, বি আর চোপড়ার নির্দেশনাতেও। তাঁকে শেষ দেখা গেছে ২০২৩-এর নন স্টপ ধামাল চলচ্চিত্রে।
অভিনেত্রী মঞ্জু বনশলের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন আসরানী। তাঁদের একমাত্র সন্তান নবীন আসরানী। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুসারে তাঁর শেষকৃত্যের পরেই এই খবর প্রকাশ্যে আনা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
গোবর্ধন আসরানি শুধুমাত্র তাঁর অভিনীত দীর্ঘ এক চলচ্চিত্র তালিকাই রেখে গেলেন না, বরং নির্মল হাসি এবং কালজয়ী সংলাপে সংজ্ঞায়িত এক উত্তরাধিকারও রেখে গেছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রে লক্ষ লক্ষ মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা চরিত্রগুলির মাধ্যমেই তাঁর অবদান বেঁচে থাকবে।